আদিত্য বর্মা। ছবি: সংগৃহীত।
বিদেশযাত্রার সময় বন্ধুর সঙ্গে সামান্য একটু মজা, তার জন্য যে এত বড় খেসারত দিতে হবে, কে জানত! ইয়ার্কির ছলে বলেছিলেন, তিনি তালিবান সদস্য। যে বিমানে আছেন, সেটাই উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে! নিরাপত্তা সংস্থার কাছে সেই খবর পৌঁছেছিল ‘হুমকি’ হিসেবে। তার পরেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ছাত্রের হাতে হাতকড়া পরাল স্পেনের পুলিশ। দু’রাত হাজতবাসের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি।
ঘটনাটি ২০২২ সালের হলেও তা প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। আদিত্য বর্মা নামে ওই ছাত্র ব্রিটেনের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের পড়ুয়া। সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালের জুলাই মাসে বন্ধুদের সঙ্গে স্পেনের মেনোর্কা আইল্যান্ডে ছুটি কাটাতে যাচ্ছিলেন আদিত্য। ইজ়ি জেটের একটি বিমানে উঠেছিলেন তাঁরা। বিমান তখন মাঝ-আকাশে, সেই সময় মজা করেই স্ন্যাপচ্যাটে এক বন্ধুকে লিখেছিলেন, ‘‘একটু পরেই বিমানটা উড়িয়ে দেব (আমি একজন তালিবান সদস্য)।’’
গ্যটউইকের ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক মারফত সেই মেসেজ ‘হাই অ্যালার্ট’ হিসেবে গিয়ে পৌঁছেছিল ব্রিটিশ নিরাপত্তা সংস্থার কাছে। সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনের নিরাপত্তা সংস্থার তরফে খবর পাঠানো হয় স্পেন কর্তৃপক্ষকে। স্পেনের দু’টি ফাইটার জেট আদিত্যদের ইজ়ি জেট বিমানের পিছু ধাওয়া করে। মেনোর্কা আইল্যান্ডে অবতরণের পর চিরুনি তল্লাশি চালানো হয় বিমানের ভিতর। তবে কোনও বোমা কিংবা বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি।
আদিত্যর হাতে হাতকড়া পরায় মাদ্রিদের পুলিশ। দু’রাত জেলে কাটানোর পর আদালতে তোলা হয় সে সময় ১৮ বছর বয়সি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছাত্রকে। জেরার মুখে আদিত্য জানান, নাশকতার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না তাঁর। নিছকই মজা করে বন্ধুকে এমনটা বলেছিলেন তিনি। মাদ্রিদের আদালত তাঁকে জামিন দিলে ব্রিটেনে ফিরিয়ে আনা হয় আদিত্যকে। ব্রিটিশ ইনটেলিজেন্স এজেন্সির তরফে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। নাশকতার কোনও উদ্দেশ্য সত্যিই তাঁর ছিল না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর ওর্পিংটনে নিজের বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি পান আদিত্য।
এ সবের মধ্যে বছর ঘুরে গিয়েছে। কিন্তু মাদ্রিদের আদালতে সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তার রায় বেরোনোর কথা। আদিত্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগ আনা হয়নি। তবে দোষী প্রমাণিত হলে তাঁকে ভারতীয় মুদ্রায় ২০ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হতে পারে। স্পেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফেও অহেতুক এই হেনস্থার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভারতীয় মুদ্রায় ৮৫ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে।