ডোমিনিক কামিংস। ছবি রয়টার্স।
এক সময়ে তিনিই নিশ্চিত করেছিলেন ব্রেক্সিট। তাঁর হাত ধরেই গদি নিশ্চিত হয়েছিল ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের। গত কাল নিজের প্রাক্তন উপদেষ্টা সেই ডোমিনিক কামিংসেরই প্রশ্নবাণে বিধ্বস্ত হলেন বরিস। সাত ঘণ্টা প্রায় কামানের গোলার মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে হল তাঁকে। অভিযোগ— অতিমারি পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ বরিস জনসন ও তাঁর প্রশাসন।
রেহাই পাননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানককও। কামিংসের অভিযোগ— তিনি মিথ্যা বলেছেন সহকর্মীদের। নিজের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। ব্রিটেনের বৃদ্ধাশ্রমে শয়ে শয়ে মৃত্যুর জন্য হ্যানককই দায়ী। কামিংসের অভিযোগে এ বার হাউস অব কমন্সে জবাবদিহি করতে হবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে।
কমন্স সিলেক্ট কমিটি-র বৈঠকে গত কাল এমপি-দের সামনে কামিংস বলেন, ‘‘অন্তত ১৫ থেকে ২০টি বিষয়ের জন্য হ্যানকককে বরখাস্ত করা উচিত। উনি একটা অদ্ভুত লক্ষ্য স্থির করেছিলেন। দিনে ১ লক্ষ করোনা পরীক্ষা। এটা কিন্তু শুধু টিভিতে ভাল দেখতে লাগে, তাই। কোনও প্রয়োজন ছিল না। শুধু এর জন্যই ওঁর মন্ত্রিত্ব যাওয়া উচিত।’’ কামিংস জানান, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করে জানিয়েছিলেন, হ্যানকককে সরানো না হলে মানুষ মরবে। ভয়ানক পরিস্থিতি হবে।
কামিংসের মতে, প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য বরিস জনসন। সুপারমার্কেটের ভাঙা ট্রলির সঙ্গে তুলনা করেন তাঁর। তাঁর কথায়, ‘‘হাজার হাজার মৃত্যু চাইলেই এড়ানো যেত। প্রধানমন্ত্রী অযোগ্য, তাই এত মৃত্যু হয়েছে।’’ তাঁর মতে, পরিস্থিতি কতটা বিপজ্জনক, গোড়ায় সেই আঁচটুকু করতে পারেননি বরিস। তাই লকডাউনের বিরোধিতা করেছেন। যত ক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, দেরি হয়ে গিয়েছে। কামিংস বলেন, তিনি বরিস জনসনকে এমনও বলতে শুনেছেন— ‘‘তৃতীয় বার লকডাউন করার চেয়ে মৃতদেহের স্তূপ দেখাও ভাল।’’ করোনাভাইরাসকে ‘ভয়ের গল্প’, ‘সোয়াইন ফ্লু-র মতো জ্বর’ বলে উল্লেখ করেছিলেন বরিস, এ অভিযোগও করেন কামিংস। বরিস জনসন অবশ্য বরাবর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত বছর তিনি নিজে করোনা-আক্রান্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত অবশ্য এমন অভিযোগ বহু লোকের মুখেই শোনা গিয়েছিল। পরে হাসপাতাল থেকে ফিরে নিজেই জানান, নার্স-চিকিৎসকদের জন্য এ যাত্রায় বেঁচে ফিরেছেন। এর পরে অতিমারি নিয়ে সতর্কতা বাড়াতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
এক সময়ে বরিস জনসনের ডান হাত ছিলেন কামিংস। ব্রেক্সিট তাঁর হাত ধরে নিশ্চিত হয়েছে। বরিস জনসনের প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। বরিসকে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে পৌঁছে দেওয়ার পিছনেও তিনি অন্যতম বলে অনেকের মত। কিন্তু এই কামিংসকেই গত বছর নভেম্বরে সরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। আজ তিনি বরিস জনসনের নেতৃত্বের প্রশ্নে বলেন, ‘‘না, ওঁকে চাই না।’’ এক সময়ে যে তিনি বরিসকে চেয়েছিলেন, তার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেন কামিংস।