জো বাইডেন এবং নরেন্দ্র মোদীর। —ফাইল চিত্র।
নির্বিচারে হত্যা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব, সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারের ঘটনা উল্লেখ করে আমেরিকা বারবার অভিযোগ করেছে, ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিষয়টি ছায়া ফেলেছে নরেন্দ্র মোদীর প্রথম সরকারি আমেরিকা সফরেও। আমেরিকা প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, জো বাইডেন এবং মোদীর বৈঠকে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তোলা হবে। আজই নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন পৌঁছেছেন মোদী।
ইতিমধ্যেই আমেরিকান কংগ্রেসের ৭৫ জন সদস্য চিঠি দিয়ে দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেন মানবাধিকারের বিষয়টি মোদীর সঙ্গে বৈঠকে তোলেন। আমেরিকান কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে মোদীর ভাষণ বয়কটের কথা জানিয়েছেন আমেরিকার আইনসভার দুই সদস্য। মানবাধিকার নিয়ে আমেরিকার আইনসভার ৭৫ জন সদস্য সরব হওয়ায় বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে। এ নিয়ে বাইডেন প্রশাসন বিবৃতিও দিয়েছে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেন, ‘‘আমেরিকা যখন দেখে সংবাদমাধ্যমের, ধর্মীয় বা অন্যান্য স্বাধীনতা খর্বের মুখে, তখন আমরা আমাদের মতামত প্রকাশ করি। সেই মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে আমরা বক্তৃতা করি না। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলবেন, কিন্তু তা নিয়ে উপদেশ দিতে যাবেন না।’’ তাঁর সংযোজন, ভারতের গণতন্ত্র ও রাজনীতির বিষয়টি নির্ধারণ করবেন ভারতীয়রাই। আমেরিকা নয়। যে কোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভুলত্রুটি হয়, তা সংশোধন করে নেওয়া উচিত।
গত ন’বছরে পাঁচ বার আমেরিকা সফর করলেও মোদীর এই বারের সফরকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকারি মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। মেনে চলা হচ্ছে যাবতীয় কূটনৈতিক প্রোটোকলও। স্বভাবতই, মোদীর এ বারের সফরের গুরুত্ব একেবারেই আলাদা। আগামিকাল বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তার আগে আমেরিকার আইনসভার ৭৫ জন সদস্য (১৮ জন সেনেটর এবং ৫৭ জন হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের সদস্য) চিঠি দিয়ে দাবি করেছেন, বাইডেন যেন মোদীর কাছে ভারতে মানবাধিকারের উদ্বেগজনক অবস্থা নিয়ে সরব হন।বাইডেনের উদ্দেশে লেখা ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ভারত-আমেরিকার মজবুত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। আমরা মনে করি, বন্ধুরাই পারে তাঁদের মতপার্থক্যের বিষয়গুলি নিয়ে সৎ এবং দ্বিধাহীন ভাবে আলোচনা করতে। তাই অন্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলির পাশাপাশি, মানবাধিকারের বিষয়টিও আপনি মোদীর সঙ্গে বৈঠকে উত্থাপন করুন’।
কোনও রকম রাখঢাক না করেই ওই ৭৫ জন সদস্য চিঠিতে বলেছেন, ‘ভারতে গণতান্ত্রিক পরিসর সঙ্কুচিত হচ্ছে। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার উত্থান ঘটছে। নাগরিক সমাজ এবং সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধ উদ্বেগজনক ভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। তাই আমেরিকার বিদেশনীতির মূল ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আপনি (বাইডেন) বিষয়গুলি নিয়ে সরব হোন’।
সেনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন এবং রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের সদস্য প্রমীলা জয়পালের নেতৃত্বে যে ৭৫ জন আইনসভার সদস্য ওই চিঠিতে সই করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সেনেটর ব্রুনি স্যান্ডার্স এবং এলিজ়াবেথ ওয়ারেন। স্যান্ডার্স এবং ওয়ারেন— এই দু’জন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। আমেরিকান কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে মোদীর ভাষণ বয়কটের কথা জানিয়েছেন আইনসভার ডেমোক্র্যাট সদস্য রশিদা তালিব এবং ইলহান ওমর।
আমেরিকার আইনসভার ৭৫ জন সদস্য যে চিঠিটি বাইডেনের উদ্দেশে লিখেছেন, সেটি প্রকাশ করেছেন জাতীয় কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে। মোদীর এই সফর নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের টুইট, ‘ভারতের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ এবং ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন নিয়ে ভারতের নীরবতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দু’জন প্রভাবশালী সেনেটর। ডেমোক্র্যাট সেনেটর তথা ভারত বন্ধু মার্ক ওয়ার্নার বলেছেন, আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার কথা আমরা শুনতে পাব’। সংবাদ সংস্থা