সন্ধে নাগাদ একটু শহরের দিকে গিয়েছিলাম। টুকিটাকি কেনাকাটা ছিল কিছু। দেখলাম, রোজকার মতোই ফাঁকা ফাঁকা শপিং মল। কোথাও একটু-আধটু জটলা। বলে না-দিলে বোঝার উপায় নেই, আজ এ দেশে জাতীয় নির্বাচনের ফল ঘোষণা হচ্ছে। জোর লড়াইয়ের পরে ভোটে জিতে পঞ্চম বার প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
দক্ষিণ ইজ়রায়েলে ধু-ধু মরুভূমির মধ্যে ছোট্ট শহর মিদ্রেসেট বেন গুরিয়ন। নয়া ইজ়রায়েলের রূপকার এবং এ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ন এখানেই থাকতেন। পাঁচিল-ঘেরা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢুকে পড়লে অবশ্য বোঝার উপায় নেই, বাইরে কী চলছে। ইজ়রায়েলি বন্ধুদের কাছেই জেনেছিলাম, মঙ্গলবার এ দেশে ভোট। ফল বেরোবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। প্রশ্ন করে জানলাম, সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ভোট চলেছে। আমাদের দেশের মতোই স্কুলে-স্কুলে তৈরি হয়েছে বুথ। ভোট হয়েছে ব্যালটে। তবে ভোটের দিন তেমন উত্তেজনা বা বুথের বাইরে লম্বা লাইন চোখে পড়েনি। সকাল সকাল ভোট দিয়েই অফিস গিয়েছেন সকলে। তবে মজার কথা, ভোটের দিন এ দেশে ট্রেনে-বাসে টিকিট কাটতে হয় না। মানুষকে ভোটে আগ্রহী করে তুলতে ইজ়রায়েল সরকার এই সুবিধাটুকু দিয়ে আসছে। ভোটের আগে শহর জুড়ে মিটিং-মিছিল, পোস্টার, দেওয়াল লিখনের ঘনঘটা চোখে পড়েনি তেমন। তবে মোবাইলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় জোরদার প্রচার চলেছে। ইউটিউব খুললেই প্রার্থীদের ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপনের ঢেউ দেখেছি। যদিও হিব্রুতে লেখা সে সব বার্তার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝিনি। জেরুসালেম বা তেল আভিভের মতো বড় শহরের ছবিটা নিশ্চয়ই আলাদা ছিল।
এই নির্বাচনে ইজ়রায়েলের ১২০টি আসনে ছোট-বড় মিলিয়ে ১২টি দল লড়েছে। তবে মূল লড়াইটা ছিল অতি দক্ষিণপন্থী, রক্ষণশীল শাসক দল ‘লিকুদ’ বনাম বামপন্থী লিবারালদের। জোর লড়াইয়ে ৩৫টি আসন জেতার পরেই বুধবার জোট-শরিকদের নিয়ে নতুন সরকার গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিরোধীদের প্রধান অভিযোগ, আর্থিক দুর্নীতির। প্রধানমন্ত্রী প্রচারে সামনে রেখেছিলেন জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমকে। হুঙ্কার দিয়েছিলেন, ভোটে জিতলে প্যালেস্তাইন-সীমান্ত ঘেঁষা অশান্ত গাজ়া ভূখণ্ড উদ্ধার করবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের কথাও বারবার প্রচারে তুলে ধরেছিলেন নেতানিয়াহু। রাজনৈতিক ভাবে অস্থির ইজ়রায়েলে এই কৌশলই হয়তো ফের জয় এনে দিল তাঁকে। নেতানিয়াহুর বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে গোড়া থেকেই গলা চড়ান বিরোধীরা। আরও মুক্ত সমাজের স্বপ্ন ফেরি করে তরুণ প্রজন্মের সমর্থন কুড়িয়েছিলেন প্রধান বিরোধী নেতা বেনি গানজ্। তবে সরকার গড়ার লড়াইয়ে এ বারের মতো হেরে গেলেও হাল ছাড়ছেন না বেনি। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘আকাশ মেঘাচ্ছন্ন মনে হলেও আশার সূর্য উঁকি দিচ্ছে। ইজ়রায়েলের মানুষের বিপুল সমর্থনই সেই রুপোলি আলোর রেখা।’’
(লেখিকা বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক)