ক্যালিফর্নিয়ার সব চেয়ে পুরোনো বাঙালি নন-প্রফিট সংস্থা ‘বেএরিয়া প্রবাসী’ পশ্চিম আমেরিকায় প্রথম দুর্গাপুজো করেছিল। ফাইল ছবি
বাঙালির দুর্গাপুজো আজ বিশ্ববন্দিত। ঢাকের বাদ্যি, শিউলির সুবাস আটকে থাকে না কোনও ভৌগোলিক কাঁটাতারে। পৃথিবীর যে-প্রান্তেই হোক, বাঙালির হৃদয় জুড়ে এ সময়ে উৎসবের অনুরণন জাগবেই! নিজের মাটি থেকে শতসহস্র মাইল দূরে, প্রশান্ত মহাসাগরের ধারে প্রযুক্তি বিশ্বের রাজধানী সিলিকন ভ্যালিতে এ বছর কুড়িটারও বেশি দুর্গাপুজোর আয়োজন চলছে, যা জাঁকজমকে, অভিনবত্বে ভারতবর্ষের যে কোনও ভিন্ রাজ্যের দুর্গোৎসবকে অনায়াসে টেক্কা দেবে! এ দেশে সেরার শিরোপা না মিললেও বিভিন্ন ক্লাবের মধ্যে পুজোর বাজেট, থিম, কে কোন শিল্পীকে আনছে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায়, সে সব নিয়ে চাপান-উতোর টক্কর তো আছেই!
ক্যালিফর্নিয়ার সব চেয়ে পুরোনো বাঙালি নন-প্রফিট সংস্থা ‘বেএরিয়া প্রবাসী’ পশ্চিম আমেরিকায় প্রথম দুর্গাপুজো করেছিল। গুটিকয়েক পরিবার মিলে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা অচিরেই সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর হাজারো দর্শনার্থীর ঢল নামে পূজাপ্রাঙ্গণে। ধুনুচি নাচ থেকে সিঁদুরখেলা, ঢাক বাজানো থেকে শঙ্খধ্বনি প্রতিযোগিতা, কিছুই বাদ যায় না। শাড়ি-গয়নার পসরা বা হরেক রকম খাবার স্টলে জমজমাট আবহ কলকাতার নস্টালজিয়া জাগাবেই!
‘বে এরিয়া প্রবাসী’র ৪৯তম শারোদৎসবে সবচেয়ে বড় চমক প্রতিমা ও মণ্ডপসজ্জায়। কলকাতার কুমোরটুলি থেকে এসেছে দশ ফুটের ফাইবারের পাঁচ চালির প্রতিমা। এ বছরের অন্যতম আকর্ষণ— আমেরিকার মাটিতে সুদূর কলকাতা থেকে বিমানে চড়ে আগত আস্ত একটা পুজোমণ্ডপ! কোন্নগরের শিল্পীর ভাবনা ও নির্দেশনায় মণ্ডপের থিম ‘বিশ্বরূপেণ সংস্থিতা’। ইউনেস্কো দুর্গোৎসবকে যে হেরিটেজ স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই বিশ্বসম্মানের রূপায়ণে ভাস্বর তাঁর শিল্পকলা। ভিসার জটিলতায় শিল্পী নিজে আমেরিকা আসতে না পারলেও মণ্ডপ পৌঁছে যাওয়ার পরে সেটি স্থাপন করার সময়ে তিনি ভিডিয়ো কলে নির্দেশ দেবেন। করোনার প্রকোপে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলার শিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে পুজো উদ্যোক্তারা এই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। বাঙালিয়ানা উদ্যাপন ছাড়াও প্রবাসীর ঐতিহ্য নানা সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড। পুজোর আনন্দ ভাগ করে নিতে এ বার তাদের অঙ্গীকার বিষ্ণুপুর ও লক্ষীকান্তপুরের দু’টি স্কুলে আটটি শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা। এই ‘প্রজেক্ট ওয়াশ’-এর বাজেট প্রায় ত্রিশ হাজার ডলার (২৪ লক্ষ টাকা)।
আপাতত পুজো উদ্যোক্তাদের ব্যস্ততা তুঙ্গে, দেবীপক্ষের দিন গুনছে প্রবাসের আকাশ-বাতাস। অতিমারির ধাক্কা কাটিয়ে উমার মর্তে আগমন এ বার অনাবিল আনন্দে ভরে দিক হৃদয়।