চিকেন-ভাত হাতে নিয়েই সোজা ফিল্ম উৎসবে, বঙ্গ সম্মেলন জমজমাট

শুধুমাত্র একটা ভাষাকে ভালবেসে কত মানুষ এক হতে পারেন? প্রশ্নটা নিজেকেই করতে হচ্ছে এই নিউ ইয়র্কে দাঁড়িয়ে। বাংলা ভাষার জন্য লক্ষ-কোটি মানুষের এক হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের কথা বাঙালি অবশ্যই ভোলেনি।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ১৯:২৫
Share:

ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে উপচে পড়া ভিড়, তারকার মেলা। ছবি: ফেসবুক ও টুইটার।

শুধুমাত্র একটা ভাষাকে ভালবেসে কত মানুষ এক হতে পারেন?

Advertisement

প্রশ্নটা নিজেকেই করতে হচ্ছে এই নিউ ইয়র্কে দাঁড়িয়ে।

বাংলা ভাষার জন্য লক্ষ-কোটি মানুষের এক হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের কথা বাঙালি অবশ্যই ভোলেনি। কিন্তু সে ছিল একটা লড়াই, একটা পুরোদস্তুর যুদ্ধ। অস্তিত্বের সঙ্কটে এক হওয়ার ইতিহাস সেটা।

Advertisement

নিউ ইয়র্কে এখন বাংলা ভাষাকে আর বাঙালিকে ঘিরে যা চলছে, তা কোনও অর্থেই লড়াই বা যুদ্ধ নয়, অস্তিত্বের সঙ্কটও নয়। বরং বাঙালির অস্তিত্ব কতটা বিশ্বজনীন, নিউ ইয়র্ক এখন তারই আয়না।

বঙ্গ সম্মেলনের এ বারের থিম ‘ভাষাকে ভালবেসে’। হাজার হাজার বাঙালি সেই ভালবাসার টানে কাজকর্ম, ব্যস্ততা, কেরিয়ার, পেশা এবং আরও অনেক কিছুকে আপাতত কয়েক দিনের জন্য শিকেয় তুলে রেখে নিউ ইয়র্কে সমবেত। বঙ্গ সম্মেলন শুরু হয়েছে শুক্রবার। তার আগের সন্ধ্যা থেকেই কিন্তু উৎসাহ-উদ্দীপনা চরমে। তার পর উৎসব শুরু হওয়া এবং দু’টো দিন দেখতে দেখতে কেটে যাওয়া। আবেগে ভাটা নেই এতটুকুও। তিন-চারটে ভেন্যুতে এক সঙ্গে চলছে উৎসব। শুধু ম্যাডিসন স্কোয়ারেই পাঁচ হাজার দর্শকাসন। প্রায় সারাক্ষণ তা উপচে পড়ছে। তাতেও পেনসিলভেনিয়া হোটেল আর নিউ ইয়র্কার হোটেল দিনভর-রাতভর গমগম করছে।

যেখানে লিটেরারি মিট চলছে, সেখানে শনিবারও শ্রীজাত, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, তিলোত্তমা মজুমদারদের ঘিরে বেশ ভিড়। অন্য একটা ভেন্যুতে তখন বেশ একটা রিইউনিয়ন গোছের ব্যাপার। শিবপুর-প্রাক্তনীরা একজোট হয়ে সেখানে খোশগল্পে মত্ত। পুরনো নানা কথকতা, হালফিলের অভিজ্ঞতা, হাসি-ঠাট্টা, খুনসুটি দেদার।

বাবলি চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এবং তত্ত্বাবধানে কলকাতার বেশ একটা অভিনব ছবি উঠে এল নিউ ইয়র্কের বুকে। কলকাতার ভাষা, সংস্কৃতি, ফ্যাশন ইত্যাদির বিবর্তনটা কেমন, তার এক অসামান্য প্রেজেন্টেশন দেখা গেল এই অনুষ্ঠানে। শুধু অনাবাসী বাঙালির জন্য নয়, এই প্রেজেন্টেশন দেখতে উৎসাহ বোধ করবে কলকাতাও।

ওপার বাংলার ফিরদৌসি আরা যখন সুরে মাতিয়ে দিচ্ছেন কোনও একটি অডিটোরিয়াম, তখন অন্য কোথাও এখানকার মানুষ টলিউড তারকাদের ঘিরে বুঁদ। চলছে খোলামেলা আলাপচারিতা। প্রবাসীর নানা কৌতূহল, নানা আলোচনা, নানা প্রস্তাব।

আরও পড়ুন: শিহরণ জাগাচ্ছে বঙ্গ সম্মেলন, নিউ ইয়র্কে নয়া ইতিহাস টলিউডেরও

তবে শুধু টলিউড নয়, বাঙালির উৎসাহ বলিউডেও যথেষ্টই। ভারতে যেমন বাঙালি আর বলিউড অঙ্গাঙ্গী, হলিউডের দেশে এসেও সেই পরম্পরায় খুব একটা ছেদ নেই। কবিতা কৃষ্ণমূর্তি আর কুমার শানুর অনুষ্ঠানে ঠাসা ভিড়।

অন্য প্রান্তে কার্তিক দাস বাউল বা দোহারের আসরও বেশ জমজমাট।

এ তো গেল কলকাতা আর ঢাকার কথা। আমেরিকাও কি কম যায়? উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন শহরের বাঙালি কমিউনিটি গত কয়েক মাস ধরে যে বঙ্গ সম্মেলনের জন্য নিয়মিত প্রস্তুতি নিয়েছে, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে ম্যানহাটানে এসে। বাঙালিদের বিভিন্ন সংগঠন নানা স্বাদের অনুষ্ঠান করছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানই অনবদ্য।

বাংলা মুভির গাঙে ভরা জোয়ার এখন এ মুলুকে। ফিল্ম উৎসবে কোনও শো ফাঁকা যাচ্ছে না। আর বাংলা ছবিতে বুঁদ হওয়ার ফাঁকে কব্জি ডুবিয়ে বাংলা কুইজিনও। উৎসবমুখর দুপুরে চিকেন-ভাতের মতো ছিমছাম বাঙালি মেনু আর কী-ই বা হতে পারে? অতএব, একটা শো থেকে বেরিয়েই রাস্তার মোড়ে বাঙালি স্টলে লম্বা লাইন। কিন্তু পরের শো-টাও মিস করা চলবে না। তাই চিকেন-ভাত হাতে নিয়েই ঢুকে পড়া অডিটোরিয়ামে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement