টিনটিনের দেশ থেকে

যাঃ! এ বারও হল না

আজ আবার সকলে কাজে ব্যস্ত। তবে অফিসের আড্ডায়, কফি শপে প্রশ্ন উঠবেই— গোটাটাই কি চরম ব্যর্থতা, নাকি ঠিক দিকে এগোনোর একটা পথ? আবার কি এ রকম সুবর্ণ সুযোগ আসবে যেখানে জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল নেই?

Advertisement

মৌমিতা মুখোপাধ্যায়

ব্রাসেলস শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০৪:০৭
Share:

ছবি: এএফপি।

কাল সকাল থেকেই মেঘলা আর ঝিরঝিরে বৃষ্টি। বেলজিয়ামে এটাই স্বাভাবিক আবহাওয়া। তবে মেঘলা হলেও সকলের মন ছিল ফুরফুরে। চার দিকেই রং— কালো, হলুদ, লাল। বাড়ি, অফিস, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সবেতেই দেশের পতাকা আর রং। ব্রাজিল ম্যাচের পর থেকে তো মেট্রো স্টেশনগুলোর নামও পাল্টে দেওয়া হয়েছিল। এক-একটা স্টেশন এক এক জন ফুটবলারের নামে! অনেকেই লাল জার্সি পরে ঘুরছিলেন, গত ক’দিনের মতো আমিও পরেছিলাম।

Advertisement

দুপুর গড়াতেই মোটামুটি সবাই অফিস থেকে বাড়ির দিকে হাওয়া! ম্যাচের আগে বাড়ি পৌঁছতে হবে যে। পাড়ায় পাড়ায় বড় স্ক্রিন। দেখতে দেখতে বিকেল ৫টা নাগাদ রাস্তা সুনসান। পাব আর পাড়ার বড় স্ক্রিনের সামনে ভিড়। একটা মেলা-মেলা ভাব। পটেটো চিপস আর বিয়ারের গন্ধে ম ম চারদিক। যেটাকে আমরা ‘ফ্রেঞ্চ ফ্রাই’ বলে জানি, সেই আলুভাজার উৎপত্তি কিন্তু বেলজিয়ামেই। ম্যাচ নিয়ে এই উত্তেজনার মধ্যে এক সময়ে দেখি, ব্রাসেলসের প্রাণকেন্দ্র, যাকে এখানে ‘সেন্ট্রাম’ বলে, সেখানে জটলার মধ্যে রয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল! আমরা কি ভারতে এমন ভাবতে পারব?

ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর নেটোর সদর দফতর হওয়ার সুবাদে বেলজিয়ামে অভিবাসী অনেক। তবে দেশের সমর্থনে সকলে মিলেমিশে একাকার। হব না-ই বা কেন? লুকাকুর শিকড় কঙ্গোয়। ফেলাইনি, শাদলির মরক্কোতে। আজ বেলজিয়াম ছেড়ে রওনা হলাম অভিবাসীদের বৃহত্তর দেশ আমেরিকায়। মন ভারাক্রান্ত এমনিই ছিল। খুব চাইছিলাম, বেলজিয়াম ফাইনালে উঠুক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হল না। লড়াই হল খুব। তবু জয় এল না। লুকাকু জ্বলে উঠতে পারলেন না অন্য দিনের মতো। তবে কুর্নিশ জানাতেই হবে ফ্রান্সের দুরন্ত ডিফেন্স আর অধিনায়ককে।

Advertisement

কাল খেলা শেষ হল এখানকার রাত সওয়া ১০টা নাগাদ। তখনও আকাশে আলো। পাড়ার জোটগুলো হাল্কা হয়ে গেল তাড়াতাড়ি।
নামল বৃষ্টিভেজা নিশ্চুপ এক রাত্তির। ছোট্ট সুন্দর বেলজিয়ামকে ঘিরে আছে শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশ— ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি। ইতিহাস বলে, কূটনীতির জোরে টিকে আছে বেলজিয়াম। তাই আবেগ
হয়তো কম।

আজ আবার সকলে কাজে ব্যস্ত। তবে অফিসের আড্ডায়, কফি শপে প্রশ্ন উঠবেই— গোটাটাই কি চরম ব্যর্থতা, নাকি ঠিক দিকে এগোনোর একটা পথ? আবার কি এ রকম সুবর্ণ সুযোগ আসবে যেখানে জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল নেই? ১৯৮৬-তে শেষ বার বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলেছিল বেলজিয়াম। ‘গোল্ডেন জেনারেশন’ কি ২০২০ সালের ইউরো কাপ বা পরের বিশ্বকাপে সফল হবে? নাকি প্রতীক্ষা করতে হবে আরও বত্রিশটা বছর?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement