ফাইল চিত্র।
তালিবান আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পরে বাংলাদেশে জঙ্গি জেহাদি শক্তি উৎসাহিত হয়েছে বলে মনে করছে সে দেশের পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের বেশ কিছু জঙ্গি মনোভাবাপন্ন যুবক বেআইনি ভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করে আফগানিস্তানের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার বলেন, “তারা আফগানিস্তানে পৌঁছে তালিবান বাহিনীতে যোগ দিতে চায়। ইতিমধ্যেই এমন কিছু অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি যুবক ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন বলে আমরা গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়েছি।” কমিশনার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন— আফগানিস্তান যেতে না পেরে যারা দেশে ফেরার চেষ্টা করবে, তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।
আফগানিস্তান যেতে গিয়ে কত জন বাংলাদেশি যুবক ভারতে আটক হয়েছেন, সেই প্রশ্নের জবাবে ঢাকার পুলিশ কমিশনার বলেন, “সঠিক সংখ্যাটি গোয়েন্দা বিভাগ আমাদের জানায়নি। তবে আরও কিছু নব্য জঙ্গি যে দেশ ছাড়ার তোড়জোড় করছে, সে খবর আমরা পাচ্ছি।” পুলিশ কমিশনার জানান— “প্রচার করা হচ্ছে, তালিবানই এখন বিশ্বের সব চেয়ে ক্ষমতাশালী বাহিনী। একটানা ২০ বছর যুদ্ধের পরে প্রতাপশালী আমেরিকান সেনা বাহিনীকে তাড়িয়ে আফগানিস্তানকে স্বাধীন করেছে তালিবান। এই সব প্রচারে উল্লসিত হয়ে বাংলাদেশের জঙ্গি মনোভাবাপন্ন তরুণেরা তালিবান বাহিনীতে নাম লেখানোটাকেই ‘জেহাদের পথ’ বলে মনে করছে।” কমিশনার শফিকুল ইসলাম মনে করেন— “শুধু বাংলাদেশ নয়, এই ঢেউ উপমহাদেশের দেশগুলি-সহ অনেক দেশেই লাগবে। সবাইকে সম্মিলিত ভাবে তাকে প্রতিহত করতে হবে।”
আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে বলে মনে করেন পুলিশের আর এক কর্তা, যাঁর নেতৃত্বে পুলিশের বিশেষ বাহিনী জঙ্গিদের নিরন্তর নজরে রাখা ও নিয়ন্ত্রণে একটার পর একটা সাফল্য পেয়েছে। এই কর্তা জানাচ্ছেন, আশি-নব্বইয়ের দশকে আফগানিস্তান ফেরত জঙ্গিরাই হুজি, জেএমবি, আনসার-আল-ইসলাম-এর মতো জঙ্গি জেহাদি সংগঠন গড়ে তোলে বাংলাদেশে। বিএনপি-জামাতে ইসলামি সরকারের আমলে পল্লবিত হয় এই সব জঙ্গি সংগঠন। কিন্তু পরে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করে এই সব সংগঠনের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান শুরু করে। ওই পুলিশ কর্তা বলেন, “তার ফলেই বাংলাদেশে আজ জঙ্গিদের নখ-দাঁত ভেঙে দেওয়া গিয়েছে। প্রায় সব আফগান ফেরত জঙ্গি নেতাকেই বিচারের কাঠগড়ায় তুলে শাস্তি নিশ্চিত করা গিয়েছে। এখন তালিবান ফের ক্ষমতায় এলে জঙ্গি শক্তি যেমন উৎসাহিত হয়েছে, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংগঠন আইএসআই-ও ফের সক্রিয় হয়ে এদের সংগঠিত করে বাহিনী গঠন করতে চাইবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতও হবে এদের নিশানা।”
তবে আফগানিস্তানে গিয়ে তালিবানে নাম লেখানো কার্যত অসম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশে জঙ্গি-বিরোধী শাখার এক কর্তা। তাঁর যুক্তি— তালিবান বাহিনী পুশতুভাষী। সেখানে পাকিস্তানের সীমান্তঘেঁষা এলাকার কিছু পুশতুভাষী জঙ্গি ছাড়া সবাই আফগানিস্তানের একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর লোক। বিদেশিরা সেখানে সুবিধা করতে পারবে না। এই পুলিশ কর্তা মনে করেন, “আগে ওসামা বিন লাদেনের আল কায়দার বাহিনীতে বিদেশিদের নিয়ে গিয়ে দল ভারী করত আইএসআই। বাংলাদেশ থেকে তারাই তরুণদের নিয়ে গিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে সেই দলে যোগ দেওয়াত। তালিবান বাহিনীতে বিদেশিরা আছে বলে শুনিনি।”