সারদার অর্থ মৌলবাদী জামাতে ইসলামির হাতে যাওয়ার অভিযোগ তুলে বামপন্থীদের প্রতিবাদ মিছিল ঢাকার রাস্তায়। মঙ্গলবার বিকেলে। নিজস্ব চিত্র
খুন, ধর্ষণ, ধর্মান্তর ও দাঙ্গায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া জামাতে ইসলামির শীর্ষ নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদির চূড়ান্ত শাস্তি ঘোষণা করা হবে বুধবার। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রাণদণ্ড দেওয়ার পরে সাইদি তার বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন। ১৬ এপ্রিল সেই আপিল মামলার শুনানি শেষ করে রায়ের দিন ঘোষণা স্থগিত রেখেছিলেন বিচারকরা। অবশেষে কাল চূড়ান্ত রায় দেবে পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ।
গত বছর দলের নায়েবে আমির (সর্বোচ্চ নেতা) সাইদির প্রাণদণ্ড ঘোষণার পরে নানা গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশ জুড়ে সন্ত্রাস চালিয়েছিল জামাতে ইসলামি ও তাদের সংগঠন ছাত্র শিবির। কয়েকশো মানুষ মারা যান ওই সন্ত্রাসে। সংখ্যালঘুদের বেশ কিছু গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এমনকী একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও ধ্বংস করেছিল জামাতের দুষ্কৃতীরা। এ বারও তাই সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। রাস্তায় টহলদারি চালাচ্ছে পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলির পাহারাও বাড়ানো হয়েছে।
জামাতের সন্ত্রাস প্রতিরোধের ডাক দিয়ে ও সাইদির ফাঁসি চেয়ে গণজাগরণ মঞ্চও আজ রাত থেকে ঢাকার শাহবাগ চত্বরে অবস্থান শুরু করেছে। আজ মধ্যরাতের পরে ফের কাল সকাল আটটায় সমাবেশ ডাকা হয়েছে। কাল সকাল ন’টা থেকে বিচারকদের রায় দেওয়া শুরু হওয়ার কথা। বিচারে জামাতের আর এক নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে প্রাণদণ্ড না দেওয়ার প্রতিবাদে এই শাহবাগ চত্বরে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান শুরু হয়েছিল। তার পরে তা গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। মৌলবাদীদের আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত হয়েও লড়াই চালিয়ে যায় গণজাগরণ মঞ্চের সদস্য ‘নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধারা’। তাঁদের আন্দোলনের চাপেই সরকার কাদের মোল্লার ফাঁসি চেয়ে ফের আপিল করতে বাধ্য হয়। সেই আপিলে আদালত ফাঁসির আদেশ দেওয়ার পরে সরকার কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতেও ঝোলায়। তার পরে এ বার দেলোয়ার হোসেন সাইদির আপিল মামলার চূড়ান্ত রায় হবে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার একের পর এক অভিযানে জামাতের দুষ্কৃতীদের আটক করার পরে তাদের সংগঠন এখন যথেষ্ট দুর্বল। অন্য বারের মতো আগের রাত থেকে হরতালের ডাকও তারা দেয়নি। কিন্তু তার পরেও চোরাগোপ্তা নাশকতা ও সন্ত্রাসের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
২০১০ সালে আটক হওয়ার পর থেকে কট্টর মৌলবাদী এই নেতা জেলেই রয়েছেন। বিএনপি-জামাত জোটের প্রার্থী হিসেবে পিরোজপুর থেকে দু’বার সাংসদও নির্বাচিত হয়েছিলেন ‘দেল্লা রাজাকার’ নামে পরিচিত জামাতে ইসলামির এই শীর্ষ নেতা। ২০১১-র ৩ অক্টোবর সাইদির বিচার শুরু হওয়ার পরে আটটি মামলায় তাঁকে খুন, গণহত্যা, লুঠপাট, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। প্রাণদণ্ডের বিরুদ্ধে সাইদির করা আপিলের শুনানিও ১৬ এপ্রিল শেষ হয়েছিল। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছিলেন, সব ক’টি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে সাইদি ফাঁসির সাজা থেকে রেহাই পাবেন বলে মনে হয় না। সাইদির আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন অবশ্য দাবি করেছেন, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তাঁর মক্কেলকে।