গত রবিবার থেকে নিখোঁজ টাইটান। — ফাইল চিত্র ।
আধ ঘণ্টার ব্যবধান। আর সেই নির্দিষ্ট সময়ের অন্তরই বিশেষ ধরনের শব্দ ধরা পড়ছে নিখোঁজ টাইটানের খোঁজ পেতে বসানো শব্দতরঙ্গ যন্ত্রে। তবে সেই শব্দ নাকি ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে! নিখোঁজ ডুবোজাহাজ থেকে এই শব্দ ভেসে আসছে বলে আশাবাদী উদ্ধারকারী দলগুলি।
গত রবিবার টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনের জন্য পাঁচ যাত্রীকে নিয়ে কানাডার উপকূলের নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে অতলান্তিকের গভীরে নেমেছিল টাইটান। কিন্তু যাত্রা শুরুর এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর ‘মাদারশিপ’ পোলার প্রিন্সের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় টাইটানের। খোঁজ মেলেনি ডুবোজাহাজটির। তার পর থেকেই টাইটানের খোঁজে তোলপাড় অতলান্তিক। টাইটানের হদিস পেতে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। সমুদ্রের ওই এলাকায় টহল দিচ্ছে একাধিক তল্লাশি জাহাজ। জলে নামানো হয়েছে অভিজ্ঞ ডুবুরিদের। নিখোঁজ যানের খোঁজ পেতে বসানো হয়েছে বিশেষ শব্দতরঙ্গ গ্রাহক যন্ত্রও। সেই যন্ত্রগুলিতেই ধরা পড়েছে এই বিশেষ শব্দ।
আমেরিকার সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, জলের নীচে টাইটানের শব্দ শোনার জন্য শব্দতরঙ্গ যন্ত্রগুলি লাগানো হয়েছিল। সেই যন্ত্রেই এই বিশেষ শব্দ ধরা পড়েছে। যদিও সেই শব্দ নিখোঁজ জলযান থেকেই আসছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই শব্দ ঠিক কি প্রকারের, তা-ও স্পষ্ট হয়নি। তবে এই শব্দ ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে বলে সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমেরিকার উপকূল রক্ষীবাহিনী বুধবার টুইট বার্তায় জানিয়েছে, এই শব্দ শোনার পর থেকে সমুদ্রের নীচে রোবট পাঠিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে উপকূল রক্ষীবাহিনীর দলগুলি। ‘শব্দের উৎস অনুসন্ধানের চেষ্টা’ করতেই সমুদ্রের তলায় রোবট নামানো হয়েছে বলেও টুইট করে জানানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি রোবট শব্দের উৎস অনুসন্ধানে ব্যর্থ হলেও রোবট দিয়ে তল্লাশি অভিযান জারি থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।
১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল মধ্যরাতে হিমশৈলে ধাক্কা মেরে উত্তর অতলান্তিকে ডুবে যায় সে সময়ের অন্যতম বিলাসবহুল যাত্রিবাহী জাহাজ টাইটানিক। মৃত্যু হয় ১৫০০-রও বেশি মানুষের। তার পর পেরিয়ে গিয়েছে ১১১ বছর। অতলান্তিক মহাসাগরের প্রায় সাড়ে চার হাজার মিটার নীচে এখনও রয়েছে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ। পর্যটকদের টাইটানে চাপিয়ে অতলান্তিকের অতলে টাইটানিকের সেই ধ্বংসাবশেষই দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল পর্যটন সংস্থা ওশানগেট। কিন্তু রবিবার থেকে নিখোঁজ সেই ডুবোযান।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, সাবমেরিনটিতে রয়েছেন ব্রিটেনের কোটিপতি ব্যবসায়ী হামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানের ব্যবসায়ী শাহজ়াদা দাউদ এবং তাঁর পুত্র সুলেমান, ওশানগেট সংস্থার মুখ্য আধিকারিক স্টকটন রাশ এবং ফরাসি নাবিক পল হেনরি নারজিওলেট।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ডুবোজাহাজটিতে নিশ্বাস নেওয়ার মতো আর বেশি অক্সিজেন বাকি নেই। ফলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই যানটিকে খোঁজার চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছে আমেরিকার উপকূল রক্ষীবাহিনী।