কিছু ক্ষণ আগেই বিকট শব্দে ভেঙে পড়েছিল পণ্যবাহী বিমানটি। মাটিতে পড়েই টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল বিমানটি। আর ভাঙা অংশগুলি এ-দিক ও-দিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল।
ঘটনার খবর পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ‘ব্রেকিং নিউজ’-এর আশায় দৌড়েছিলেন স্থানীয় টিভি চ্যানেলের তরুণী সাংবাদিক অ্যাকল ডেঙ্গ। ঘটনাস্থলে যখন পৌঁছলেন, দেখলেন সেখানে তখনও আর কোনও সংবাদমাধ্যম পৌঁছতে পারেনি। ফলে খবরের আশায় চার পাশ ঘুরে দেখতে দেখতে হঠাৎ দেখলেন, মৃতদেহের স্তূপের মধ্যেই পড়ে রয়েছেন এক ব্যক্তি। কিন্তু জীবিত কি মৃত— তা ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। আর ওই ব্যক্তির বুকের উপরই শুয়ে এক শিশুকন্যা। দেখে মনে হচ্ছিল, যেন আরামে ঘুমিয়ে রয়েছে সে। চোখেমুখে কোথাও দুর্ঘটনার লেশমাত্র নেই।
ওই দৃশ্য দেখে সে দিকেই ছুটেছিলেন অ্যাকল। ‘ব্রেকিং’ ভুলে নিমেষের মধ্যেই কোলে তুলে নিয়েছিলেন শিশুটিকে। তখন আর বুঝতে বাকি নেই, শিশুটির দেহে তখনও প্রাণ রয়েছে। আর যাঁর বুকের উপর দিব্যি শুয়েছিল ওই শিশুকন্যা, প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনিও। ফলে দেরি না করেই দুর্ঘটনায় দুই আহতকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন অ্যাকল। এ ভাবেই ওই সাংবাদিকের তৎপরতা ও উপস্থিত বুদ্ধির জোরেই প্রাণ বেঁচেছে ওই দু’জনের।
তবে বিমানটির বাকি আরোহীরা কেউই জীবিত ছিলেন না। বুধবার সকালে হোয়াইট নীল নদের তীরে আছড়ে পড়েছিল পণ্যবাহী বিমানটি। তাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ৪০ জন। কিন্তু ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছে ওই দু’জন।
এর পর পণ্যবাহী বিমানে মানুষের যাতায়াত নিয়ে অবশ্য প্রশ্নও উঠেছে। সরকারি সূত্রের খবর, দক্ষিণ সুদানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কখনও কখনও পণ্যবাহী বিমানেও যাতায়াত করেন যাত্রীরা। দক্ষিণ সুদানের বিমান সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, পণ্যবাহী ওই বিমানটিতে মানুষ পরিবহণ করার অনুমতি ছিল না। ওই সংস্থার দাবি, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটির ক্যাপ্টেন জানিয়েছিলেন, ১২ জন যাত্রী এবং ছ’জন বিমানকর্মী নিয়ে উড়েছিল ওই পণ্যবাহী বিমানটি।
কিন্তু সন্দেহ, বিমানটিতে ওই ১৮ আরোহী ছাড়াও আরও অনেকেই ছিলেন। যার জেরে ওই দুর্ঘটনা। প্রাথমিক ভাবে তাই অনুমান, সম্ভবত অত্যধিক ভার সহ্য করতে না পেরেই ভেঙে পড়েছিল বিমানটি।
এ দিকে, আচমকা এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছিলেন থঙ্গ ডেঙ্গ। কারণ দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই বিমানেই তো ছিলেন তাঁর স্ত্রী এবং দুই মেয়ে। তড়িঘড়ি পালৌইচ থেকে জুবায় পৌঁছন। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও মেয়েদের হারানোর খবরে ভেঙে পড়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু জুবায় পৌঁছেই যখন জানতে পারেন, বেঁচে গিয়েছে তাঁর ছোট মেয়েটা। তখনই ছুটে যান হাসপাতালে। সেখানে পৌঁছে দেখেন লেপ-কম্বল মুড়ি দিয়ে দিব্যি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রয়েছে তাঁর ছোট্ট মেয়ে, নালৌ।
দুর্ঘটনার ভয়াবহতা ছাপ ফেলতে পারেনি শিশুটির মনে। তবে দুর্ঘটনায় ভেঙে গিয়েছে নালৌ-এর হাত-পা। কপালের ক্ষতটাও দগদগে। এখন বাবা এবং হাসপাতাল কর্মচারীদের দেখভালে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে ওই খুদে।
আর ওই ঘটনার দিন থেকে ছোট্ট মেয়েটার পাশেই রয়েছেন অ্যাকল। ভাব জমিয়ে ফেলেছেন নালৌ-এর সঙ্গে। এখন অ্যাকলের সঙ্গে বেশ খোশ মেজাজেই থাকে নালৌ। কিন্তু মাঝে মাঝেই কাউকে যেন খুঁজছে সে। এখনও তো জানে না, ওই দুর্ঘটনাই কেড়ে নিয়েছে তার মা ও দিদি-কে।