ছবি: সংগৃহীত।
আতশবাজির সোনালি আর নীল রোশনাইতে ঢাকা পড়েছে সিডনি অপেরা হাউসের আকাশ। তবে আলোর নীচে জমাট গাঢ় অন্ধকার। সঙ্গে গা ছমছমে নিঃস্তব্ধতা। বর্ষবরণের উৎসব উদ্যাপনের জমায়েত নেই। প্রতি বারের মতো জমজমাট হইহল্লোড়ও নেই। বরং আতশবাজির ফোয়ারার মাঝেও বিষাদঘেরা বর্ষবরণের সিডনি। অতিমারির আবহে ঘরে বসেই ২০২০ সালকে বিদায় জানালেন অস্ট্রেলীয়রা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো করোনা প্রতিষেধকের আশায় দিন গুনতে থাকা সেখানকার মানুষজন এ ভাবেই ‘স্বাগত’ বললেন ২০২১-কে।
বর্ষবরণের অঙ্গ হিসেবে প্রতি বারের মতো সিডনি অপেরা হাউসে আতশবাজি পোড়ানো হলেও বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। টিভিতে সম্প্রচার দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে অস্ট্রেলীয়দের। বন্ধ দেশের অভ্যন্তরীণ সীমানাও। নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধান গ্ল্যাডিস বেয়ারজিকলিয়ান বলেন, “কী নারকীয় একটা বছর গেল! আশা করি ২০২১ সালটা আমাদের কাছে সহজতর হবে।”
অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রায় একই আবহ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চেও। করোনাক্রান্ত বিশ্বে নতুন বছরের দিকে তাকিয়ে সেখানকার বাসিন্দারা। অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডেের মতো এ বার বর্ষবরণের জমায়েত দেখা যাবে না বিশ্বের অন্যান্য শহরেও। বেজিংয়ে টিভি টাওয়ারের আলোর কারসাজি বন্ধ। মধ্য লন্ডনের ট্রাফালগর স্কোয়্যারের মাঝে সিংহের অতিপরিচিত মূর্তি ঘেরা ব্যারিকেডে। মস্কোর রেড স্কোয়্যারেও একই চিত্র। ভ্যাটিকানের মাস-এ পোপের উপস্থিতি থাকবে না। নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে ইটালির তিবের নদীতে ঝাঁপাবেন না কোনও উৎসাহী।
আরও পড়ুন: নতুন স্ট্রেনের মধ্যেই অক্সফোর্ডের টিকা ব্যবহারে অনুমতি দিল ব্রিটেন
নিউ ইয়র্কের ছবিটা অবশ্য সামান্য আলাদা। সেখানে প্রথামাফিক ‘নিউ ইয়ার্স বল’-এর জন্য ব্রডওয়েতে উপস্থিত থাকবেন অনেকে। তবে তাঁরা প্রত্যেকেই হয় স্বাস্থ্যকর্মী নয়তো জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। সংক্রমণের আতঙ্কে টাইমস স্কোয়্যারে গা-ঘেঁষাঘেষি ভিড় নেই। ব্রডওয়েতে দর্শকও হাতেগোনা, বাছাই করা। স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবারের সদস্য উপস্থিত থাকলেও নিয়ম মেনে ছ’ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
গত বছর বর্ষবরণের আগের রাত থেকে বিশ্ব জুড়ে এখনও পর্যন্ত ১০ লক্ষ ৭০ হাজারেরও বেশি প্রাণ কেড়েছে কোভিড-১৯। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৮,২০০ কোটি পার করেছে। আর সকলের মতো বছরটা ভুলে যেতে চান জার্মানির জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও। চ্যান্সেলর হিসেবে নতুন বছরের আগের রাতে প্রথামাফিক ভাষণের ১৬তম বছরে তিনি বলেন, “ এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে গত ১৫ বছরের মধ্যে কখনও আমাদের এতটা বিষাদগ্রস্ত বছর কাটেনি। তবে সমস্ত উদ্বেগ এবং সংশয় সত্ত্বেও নতুন বছরের দিকে এতটা আশা নিয়েও আমরা তাকিয়ে থাকিনি।” করোনায় মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাঁর মন্তব্য, “করোনায় প্রিয়জনকে হারানোর শোকে মানুষজন কতটা তিক্ততা অনুভব করছেন অথবা যাঁরা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে অসহায় ভাবে লড়ছেন, তাঁদের পরিস্থিতিটা কল্পনা করতে পারি।”
আরও পড়ুন: ২ জানুয়ারি থেকে করোনা টিকার মহড়া সব রাজ্যে, বলছে কেন্দ্র
অন্যান্য বহু দেশের মতো জার্মানিতেও নতুন বছরের উৎসব বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্ষবরণের আগে দেশ জুড়ে সমস্ত ধরনের বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে সে দেশের সরকার। করোনাবিধি ভঙ্গে কড়া শাস্তির ঘোষণা করেছে বার্লিন পুলিশ।
বার্লিনের এই সতর্ক চিত্র অবশ্য দেখা যায়নি চিনের উহানে। করোনায় প্রথম আক্রান্তের সন্ধান যে শহরে ধরা পড়েছিল সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগের পরিবর্তে সতর্কতার ছাপ। ২৩ বছরের শিক্ষক ওয়াং শুয়েমেই বলেন, “করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে সবচেয়ে আগে সুরক্ষার কথাই মাথায় রাখা প্রয়োজন।”
সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই স্পেনের শহর মাদ্রিদে যাবতীয় উৎসব স্থগিত রাখা হয়েছে। স্পেন জুড়ে শুক্রবার রাতের কার্ফু বাড়িয়ে দেড়টা পর্যন্ত করা হয়েছে। সতর্কতা নিয়েছে ব্রিটেন সরকারও। করোনার নতুন স্ট্রেন (প্রজাতি) ধরা পড়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের নতুন বছরের প্রথম দিন ঘরে বসে কাটানোর বার্তা দিয়েছে শহরের প্রায় সব হোর্ডিং। ট্রাফালগর স্কোয়্যারের পাশাপাশি লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়্যারেও বসানো হয়েছে ব্যারিকেড।
বর্ষবরণের আগের রাতে বৃহস্পতিবার ইটালিতে সমস্ত পানশালা-রেস্তরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্পেনের মতোই কার্ফুর সময়সীমা বাড়িয়েছে প্রশাসন। ফ্রান্সেও চলবে রাত্রিকালীন কার্ফু। কার্ফু শুরুর আগে যাঁরা ডিনার সারতে বেরোবেন, তাঁদের একসঙ্গে ছ’জনের বেশি এক টেবিলে বসতে দেওয়া হবে না বলে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তবে বাড়ি থেকে বেরোতে চাইছেন না অনেকেই। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে কী করবেন? স্থানীয় বাসিন্দা অ্যানি চ্যাপলিন বলেন, “ফোয়া গ্রা, শ্যাম্পেন আর খাবারদাবার খেয়েই সময় কাটবে। আমি বাড়িতেই থাকব।”