চতুর্থ কৃষ্ণা বসু স্মারক বক্তৃতার আসরে রাশিয়া-বিশেষজ্ঞ ডমিনিক লিভেন, নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর চেয়ারপার্সন সুগত বসু ও অধিকর্তা সুমন্ত্র বসু। মঙ্গলবার নেতাজি ভবনে। ছবি: নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর সৌজন্যে।
ভলোদিমির জ়েলেনস্কি ও তাঁর সেনাবাহিনীকে সরাতে পারলেই ইউক্রেনবাসী রুশ সেনাকে ফুল হাতে অভ্যর্থনা করবেন বলে ভেবেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার, সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকীতে চতুর্থ কৃষ্ণা বসু স্মারক বক্তৃতায় এ ভাবেই রাশিয়া-ইউক্রেন সম্পর্কের সমীকরণ ব্যাখ্যা করলেন রাশিয়া- বিশেষজ্ঞ ডমিনিক লিভেন।
পারিবারিক সূত্রে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে রাশিয়া ও সাম্রাজ্য বিশেষজ্ঞ ডমিনিকের। তাঁর মতে, রুশ ও ইউক্রেনীয় জাতিসত্ত্বার মধ্যে যোগ গভীর। আবার রাশিয়ার পক্ষে ক্রাইমিয়া, ডনবাসের মতো অঞ্চল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে তৈরি সঙ্কট অত্যন্ত গভীর। ডমিনিকের মতে, ইউরোপের ওই অঞ্চলে পুরোপুরি শান্তি নাও ফিরতে পারে। ধাপে ধাপে চলতে পারে সংঘর্ষ।
তবে সংঘর্ষের ভবিষ্যৎ আরও কিছু বিষয়ের উপরে নির্ভর করছে বলে মনে করেন ডমিনিক। তাঁর মতে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হবেন কি না, ইউক্রেন কতটা আমেরিকান ও ইউরোপীয় সাহায্য পাবে, চিন ও আমেরিকার সম্পর্ক কোন দিকে গড়াবে, এমন অনেক বিষয়ের উপরেই নির্ভর করছে এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ।
প্রয়াত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের বৈদেশিক সম্পর্ক সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন সদস্য ডমিনিকের মতে, অনেক ক্ষেত্রেই রাশিয়ার ক্ষমতাকে ছোট করে দেখেছে পশ্চিমি দেশগুলি। আবার নিজেদের ক্ষমতাকে অনেক বাড়িয়ে দেখেছেন পুতিন। তাঁর মতে, প্রাক্তন গুপ্তচর পুতিনের পক্ষে সোভিয়েট ইউনিয়নের প্রাক্তন অঙ্গরাজ্য ইউক্রেনের স্বাধীন জাতিসত্ত্বার জেগে ওঠা মেনে নেওয়া কঠিন। তার পিছনে আমেরিকান গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়াই তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক।
ডমিনিকের বক্তব্য, পশ্চিমি দেশগুলির তরফে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক গোষ্ঠী নেটোয় ইউক্রেনকে সদস্য করার বিষয়ে প্রকাশ্যে চর্চা ছিল অত্যন্ত ভুল পদক্ষেপ।
রাশিয়া বিশেষজ্ঞের মতে, বিভিন্ন সঙ্কটের নিরিখে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হবে দিল্লির অবস্থান।
আর তাঁর কথার সূত্র ধরেই নেতাজি রিসার্চ বুরোর অধিকর্তা সুমন্ত্র বসু বললেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এক রুশ আধিকারিক ভারতীয় সাংবাদিকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ভারত ইসলামাবাদে বন্ধু সরকার দেখতে চাইবে কি না। ভারতীয় সাংবাদিকের জবাব শুনে রুশ আধিকারিক জানিয়েছিলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে পাকিস্তানের মতো। সেখানে রাশিয়া বন্ধু সরকার বসানোর চেষ্টা করছে।