Drinking Water Crisis

বিপজ্জনক জলপান রোজ, দাবি রিপোর্টে

পরিস্রুত পানীয় জল মানুষের অধিকার। সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছেন কি না, সে নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে সমীক্ষা শুরু করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। এর আগেও সমীক্ষা হত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ০৫:২৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

জলে ‘বিপদ’! আনুমানিক ৪৪০ কোটি মানুষ সেই ‘বিপজ্জনক’ জলপান করছেন রোজ। এমনই এক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্স’ পত্রিকায়। গবেষণাটিতে যুক্ত রয়েছেন ‘সুইস ফেডেরাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাকোয়াটিক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’-র জল বিশেষজ্ঞ এস্থার গ্রিনউড। তাঁর কথায়, ‘‘এত মানুষের কাছে পানীয় জল নেই, এটা মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে এই পরিস্থিতির বদল প্রয়োজন।’’ তাঁদের গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের কাছে পরিস্রুত পানীয় জলের জোগান নেই।

Advertisement

পরিস্রুত পানীয় জল মানুষের অধিকার। সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছেন কি না, সে নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে সমীক্ষা শুরু করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। এর আগেও সমীক্ষা হত। কিন্তু তাতে খতিয়ে দেখা হত, বিশ্বে পানীয় জলের উৎস বা ভান্ডারগুলিতে উন্নতি হয়েছে কি না। অর্থাৎ কুয়োর জল কিংবা জলের পাইপ, বৃষ্টির জল সংগ্রহ ব্যবস্থা দূষণ থেকে সুরক্ষিত না কি। তাতে দেখা গিয়েছিল, বিশ্বের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের কাছে পানীয় জল রয়েছে। কিন্তু সেই পানীয় জল নিরাপদ না কি, পরিস্রুত না কি, তা নিয়ে তথ্য ছিল অল্পই। গ্রিনউড বলেন, ‘‘পানীয় জলের গুণমান নিয়ে এখনও যথেষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই।’’ তিনি জানিয়েছেন, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে জলের গুণমান সংক্রান্ত যে তথ্যভান্ডার রয়েছে, তাতে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকের কথা রয়েছে। তা থেকে বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি অনুমান করা কঠিন। তাও একটি সার্বিক চিত্র তৈরির চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা।

মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ সুস্থায়ী উন্নয়ন (সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট) প্রকল্প তৈরি করে। এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে মানুষের কাছে সুলভে নিরাপদ ও পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। আন্তর্জাতিক সংগঠনটি পরে তাদের লক্ষ্যমাত্রায় আরও কিছু বিষয় সংযোজন করেছে। যেমন, ১) উন্নত পানীয় জলের উৎস থাকবে, ২) প্রতিটি মানুষের পানীয় জলের উৎস তাঁর বাসস্থানের কাছে হবে, ৩) নিয়মিত জলের জোগান থাকবে।

Advertisement

এই লক্ষ্যমাত্রা মাথায় রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ও রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু-অধিকার সংস্থা ইউনিসেফ-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম ফর ওয়াটার সাপ্লাই, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন’ (জেএমপি) গবেষণা শুরু করে। ২০২০ সালে তারা জানায়, আনুমানিক ২২০ কোটি মানুষের কাছে নিরাপদ পানীয় জলের জোগান নেই। এই হিসাব কষতে বিভিন্ন দেশের থেকে জনসাধারণের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তারা। গ্রিনউড ও তাঁর সতীর্থরা ওই তথ্যের উপরে ভিত্তি করে ভিন্ন পদ্ধতিতে হিসাব করেন। তাঁরা প্রয়োজনীয় চারটি বিষয়ের মধ্যে অন্তত তিনটি বিষয় খতিয়ে দেখেছেন। যেটিতে সবচেয়ে কম নম্বর উঠেছে, সেটিকে গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন, কোনও শহরের প্রশাসনের কাছে যদি পানীয় জল সংক্রান্ত সামগ্রিক তথ্য না থাকে, কিন্তু দেখা যায় যে, বাসিন্দাদের ৪০ শতাংশের কাছে দূষণমুক্ত জল রয়েছে, ৫০ শতাংশের কাছে উন্নত পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে ও ২০ শতাংশের বাড়িতে জলের জোগান রয়েছে, সে ক্ষেত্রে জেএমপি ২০ শতাংশের কাছে নিরাপদ পানীয় জলের সংস্থান রয়েছে বলে ধরে নিয়েছে।

‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টটিতে এই পদ্ধতিতে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত, ২৭টি নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশের ৬৪,৭২৩টি পরিবারের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কোনও পরিবারের কাছে যদি চারটি বিষয়ের মধ্যে একটিও না থাকে, তা হলে তাদের কাছে নিরাপদ পানীয় জল নেই বলে গণ্য করা হয়েছে।

এই তথ্য ও মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের সাহায্য নিয়ে দেখা গিয়েছে, আনুমানিক ৪৪০ কোটি মানুষের কাছে নিরাপদ পানীয় জলের সংস্থান নেই। এঁদের অর্ধেক নিয়মিত যে জল পান করেন, তাতে ই কোলাই-এর মতো ব্যাক্টিরিয়া রয়েছে। গবেষণাপত্রে আরও জানানো হয়েছে, যে ৪৪০ কোটি মানুষের কথা বলা হয়েছে, তাঁদের অর্ধেকের বাস দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকায় (সাহারা মরুভূমির নীচে আফ্রিকার অংশ)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement