সমাবেশে ছবি হাতে মিঠুন। ডান দিকে, আঁকা নিয়ে সায়নী। নিজস্ব চিত্র
খাতার পাতায় রংতুলিতে সেজে উঠেছিল এক মেয়ে। কপালে তার তৃতীয় নয়ন। দু’চোখ ভেসে যায় জলে। রাঙা সিঁথির আভা সারা মুখে। এ-পারের এক কন্যার আঁকা সেই ছবিই ও-পারে বাংলাদেশের বিক্ষোভের প্রতীক হয়ে উঠল। ফের এক বার মিলে গেল দুই বাংলা।
নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা বছর কুড়ির সায়নী দত্ত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ভালবাসেন ছবি আঁকতে। ছবিটি এঁকেছিলেন দু’বছর আগে। ইন্টারনেটে আপলোডও করেছিলেন আগে। ‘‘অত্যাচারিত সব মেয়ের ভিতরেই লুকিয়ে আছে দুর্গা। সে জেগে উঠবেই,’’ এই ভেবে ছবিটি এঁকেছিলেন সায়নী। সময়ের নিয়মে তা ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। আর তাই হয়তো পড়শি দেশের দুর্দিনে ‘প্রতিবাদ’ হয়ে উঠেছে এই ছবি। দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে মৌলবাদী দুষ্কৃতীদের একের পর এক হামলার ঘটনায় প্রতিবাদে মুখর বাংলাদেশিরা। রাজধানী ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম, বিক্ষোভ শুরু হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তাতে যোগ দিয়েছেন শিক্ষক, পড়ুয়া, সংস্কৃতিকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ।
ক্ষোভ-বিক্ষোভে দুই বাংলার এ ভাবে মিলেমিশে যাওয়া অবশ্য নতুন নয়। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এ ভাবেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনায় বিক্ষোভের স্লোগান হয়ে উঠেছিল ‘হোক কলরব’। পরবর্তী কালে প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের গায়ক অর্ণবের গান ‘হোক কলরব ফুলগুলো সব লাল না হয়ে নীল হলো ক্যান?...’
এখানে অবশ্য অজান্তেই ঘটে গিয়েছে সবটা। শনিবার বাংলাদেশের চট্টগ্রামে সম্প্রীতি সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মিঠুন ধর। সোনার কাজ করেন তিনি। ছবিটি নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর প্রতিবাদ হিসেবে। মিঠুন জানান, ইন্টারনেটে ছবিটি খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। কার আঁকা জানতেন না। ছবির অশ্রুসজল মুখখানি দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, এটিই প্রতিবাদের যোগ্য জবাব হতে পারে। স্থানীয় সাইবার কাফে থেকে ছবিটি বড় করে প্রিন্ট করিয়ে সমাবেশে যান। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ের মাঝে প্রতিবাদের মুখ হয়ে ওঠে সেটি। এ দিন এ-পার বাংলার কোনও মেয়ের আঁকা ছবি জানতে পেরে উচ্ছ্বসিত তিনি। ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিল্পীকে।
সায়নীও জানতেন না তাঁর আঁকা এ ভাবে বাংলাদেশের সম্প্রীতির মুখ হয়ে উঠবে। সংবাদপত্রে সমাবেশের ছবি দেখে জানতে পারেন কী ঘটেছে। জানিয়েছেন, বন্ধুদের অভিনন্দনে ভেসে গিয়েছে ফোনের ইনবক্স। সোশ্যাল মিডিয়াতেও শ’য়ে শ’য়ে শুভেচ্ছাবার্তা। সায়নী বলেন, ‘‘স্বপ্নেও ভাবিনি। পুরোটাই চমক ছিল। আমার আঁকা ছবি যে এ ভাবে বাংলাদেশে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে, সেটা ভেবেই অসম্ভব ভাল লাগছে।’’