সিরিল আলমেইদা
বছর দুই আগে জঙ্গি দমন প্রসঙ্গে নওয়াজ শরিফের সরকার এবং সেনাবাহিনীর টানাপড়েন প্রকাশ্যে এনে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন পাক সাংবাদিক সিরিল আলমেইদা। সেনা তাঁর উপরে তখন থেকেই খাপ্পা। এ বার দেশের গোপন ও স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে সিরিলের নামে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল লাহৌর হাইকোর্ট। আদালতের এই নির্দেশকে সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে সুর চড়িয়েছে পাক মানবাধিকার কমিশন।
ভোটের ঠিক দু’মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রথম সারির এক দৈনিকের সাংবাদিক সিরিল। যেখানে নওয়াজ বলেছিলেন, ‘‘আমাকে হটিয়ে ইমরান খানকে মসনদে আনতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে সেনা।’’ সে বার কথায় কথায় ওঠে ২০০৮ মুম্বই হামলার প্রসঙ্গও। নওয়াজ সাফ জানান, হামলাকারীরা পাকিস্তানিই। আর ওই হামলায় পাক সেনারই প্রত্যক্ষ মদত ছিল। তিন বারের প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য ‘শত্রুপক্ষকে অক্সিজেন জোগাবে’— এই অভিযোগ এনে নওয়াজের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করেন এক পাক সমাজকর্মী। সেই সাক্ষাৎকারের সূত্রে এ বার নিশানা সিরিল। আপাতত তিনি দেশ ছাড়তে পারবেন না। ঘরোয়া ভাবে অনেকেই মানছেন, আড়ালে থেকে আসল খেলাটি খেলছে পাক সেনাবাহিনীই।
সিরিল গত কালের শুনানিতে হাজির ছিলেন না। সে জন্য তাঁর আইনজীবীকে এক প্রস্ত ধমক দেয় আদালত। ৮ অক্টোবর, পরের শুনানিতে সিরিলকে হাজির করতে বলা হয়েছে। ওই দিন হাজিরা দিতে বলা হয়েছে নওয়াজ ও সাক্ষাৎকারটি দেওয়ার সময়ে যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই শাহিদ খকন আব্বাসিকেও। ওই সাক্ষাৎকারের পরে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ নওয়াজের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায়। সেটা হয়নি। তাই প্রশ্ন উঠেছে আব্বাসির ভূমিকা নিয়েও।
ক্ষমতায় এসেই সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষে বার্তা দেন ইমরান খান। তবু এক জন সাংবাদিক তাঁর কাজ করেছেন বলে তিনি কেন গ্রেফতারির মুখে— উঠেছে প্রশ্ন। ইমরানের জমানায় পুরনো মামলায় যে ভাবে সাংবাদিককে কোণঠাসা করা হচ্ছে, আজ তার কড়া নিন্দা করে দেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। বিবৃতি দিয়ে কমিশন জানিয়েছে, ‘‘সাংবাদিকতা কখনও অপরাধ হতে পারে না।’’ অবিলম্বে সিরিলের উপর থেকে ‘নো-ফ্লাই’ নির্দেশ তুলে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন মেহদি হাসান।