‘টেম্পল মাউন্ট’-এর কাছে এখানেই শেষ হয়েছে সেই রাস্তা।
বহু বছর আগেই জেরুসালেম শহরের মাঝে প্রাচীন রাস্তাটির খোঁজ মিলেছিল। কিন্তু সেটি কত পুরনো, তা জানা ছিল না। দীর্ঘ গবেষণার পরে সম্প্রতি এক দল প্রত্নতত্ত্ববিদ দাবি করলেন, রাস্তাটি খ্রিস্টের সমসাময়িক। প্রকাণ্ড রাস্তাটি তৈরি করেছিলেন জুডিয়া শহরের (বাইবেলে উল্লিখিত এলাকা, বর্তমানে দক্ষিণ প্যালেস্তাইনের অংশ) রোমান গভর্নর পন্তিউস পিলাতে। রোমান সম্রাট তিবেরিয়াসের সময়ে জুডিয়া শাসন করতেন তিনি। কথিত আছে এই ‘কুখ্যাত’ শাসকের নির্দেশেই যিশুর সাজা হয়েছিল, ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল তাঁকে।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছিল তীর্থযাত্রীদের কথা মাথায় রেখে। ২০০০ ফুট (৬০৯ মিটার) দীর্ঘ রাস্তাটি ‘সিলোম পুল’ হয়ে ইহুদি ধর্মের পবিত্রতম স্থান ‘টেম্পল মাউন্ট’-এ যেত। পথের মাঝে সিলোম পুলে স্নান করতেন, একটু জিরিয়ে নিতেন তীর্থযাত্রীরা। পন্তিউস পিলাতে সম্পর্কে এত দিন খুব অল্পই জানা গিয়েছে। তাঁর তৈরি করা রাস্তার খোঁজ পাওয়ার পরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোমান শাসকের ইতিহাস হয়তো আরও একটু জানা যাবে এ বার। তাঁরা বলছেন, ‘‘প্রাচীন গ্রন্থগুলোতে পন্তিউস সম্পর্কে এত দিন শুধু নেতিবাচক তথ্যই মিলত। এই প্রথম সদর্থক কিছু জানা গেল— তিনি ভাল কাজও করেছেন।’’ পন্তিউসের তৈরি রাস্তা সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি ‘তেল আভিভ: জার্নাল অব দ্য ইনস্টিটিউট অব আর্কিয়োলজি অব তেল আভিভ ইউনিভার্সিটি’-তে প্রকাশিত হয়েছে।
রাস্তাটির অস্তিত্বের কথা জানা যায় বহু দিন আগে। ১৯ শতকের গোড়ার দিক থেকে ওই অঞ্চলে খননকাজ চালাচ্ছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। তখনই রাস্তাটির খোঁজ মিললেও জানা ছিল না, কোন সময়ে সেটি তৈরি হয়েছিল। ইজ়রায়েল ‘অ্যান্টিকুইটিস অথরিটি’ ও তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদেরা খননকাজ চালাতে-চালাতে সম্প্রতি বেশ কিছু প্রাচীন মুদ্রা খুঁজে পান মাটির তলা থেকে। মুদ্রাগুলি ৩০ থেকে ৩১ খ্রিস্টাব্দের সময়কার। জানা যায়, এই সময়ে জুডিয়ার শাসক ছিলেন পন্তিউস পিলাতে। এর পরবর্তী সময়ে ওই মুদ্রাগুলোর অস্তিত্ব মেলে না। ফলে পন্তিউসের সময়েই রাস্তাটি নির্মাণ হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রাচীন লেখক ফিলো-র (জীবনকাল: ২০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৫০ খ্রিস্টাব্দ) লেখায় পাওয়া যায়— ‘‘জুডিয়া শহরের বাসিন্দারা দুর্নীতি, চুরি-ডাকাতি, অত্যাচার, বিনা বিচারে সাজায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁরা রোমান সম্রাট তিবেরিয়াসকে অনুরোধ করেন জুডিয়ার দুর্নীতিগ্রস্ত শাসক পন্তিউসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’’ গবেষকরা বলছেন, এই রাস্তার ইতিহাস জানার পরে কিন্তু মনে করা হচ্ছে, পন্তিউস এতটাও দুর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন না। তাঁদের কথায়, ‘‘ও রকম চওড়া রাস্তা, তার গঠন, নির্মাণের ধাঁচ দেখা বোঝা যাচ্ছে, দক্ষ কর্মীরা রাস্তাটি তৈরি করেছিলেন।’’ তবে এমনটাও হতে পারে, নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকার পরে হয়তো পরিস্থিতি সামলাতে পন্তিউস ওই রাস্তাটি তৈরি করিয়েছিলেন।