বেইরুট জুড়ে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ চলছে। ছবি: এএফপি।
বন্দরে বিধ্বংসী বিস্ফোরণ ঘিরে অশান্ত হয়ে উঠেছে বেইরুট। মঙ্গলবারের ওই ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও বিচারের দাবিতে শনিবার হাজার হাজার মানুষ মধ্য বেইরুটের পথে নামেন। তাঁরা পার্লামেন্ট ভবনের নিরাপত্তা ঘোরাটোপ পেরিয়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। কোথাও কোথাও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন পথ অবরোধ করেন তাঁরা। সেনাবাহিনী জনতার দুঃখের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েও অবরোধ, বিক্ষোভ ও বেআইনি কাজ থেকে বিরত থাকার আবেদন জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে। কিন্তু তাতে শান্ত হয়নি ক্রুদ্ধ জনতা। এ বার কড়া হাতে নামে দাঙ্গা-পুলিশ। বিক্ষোভকারীদর ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। অন্তত ২২ জন বিক্ষোভকারীকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, রণক্ষেত্র হয়ে ওঠা পথে অন্তত ৮৭ জন বিক্ষোভকারীর চিকিৎসা চলছে।
পণ্য আমদানির মূল বন্দরটি বিধ্বস্ত হওয়ায় খাদ্য ও ওষুধের সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে লেবাননে। বর্তমান মজুতে তাদের ৬ সপ্তাহ মতো চলবে। ভারত এই পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে তৎপর হয়েছে। লেবাননে খাদ্যশস্য ও ওষুধ পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে সূত্রের খবর। লেবাননের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সুহেল আজ়াজ খান তাঁর কূটনীতিক বাহিনীকে নিয়ে যোগাযোগ রাখছেন লেবানন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। এ দেশে অন্তত ৪ হাজার ভারতীয় রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, লেবাননকে সাহায্য করার বিষয়ে সে দেশের ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিনি ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বলেছেন। বন্দরটির পুনর্নির্মাণে সাহায্য করতে চায় তুরস্ক।
বিস্ফোরণটি হয়েছে রোসুস নামের এক জাহাজে মজুত রাখা ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে। জাহাজটি ওই বন্দরে পড়ে ছিল প্রায় সাত বছর। সবচেয়ে রহস্যজনক বিষয়টি জানিয়েছেন এটির প্রাক্তন ক্যাপ্টেন বরিস প্রোকোশভ। তিনি শুনেছিলেন ২০১৫-১৬ সালে রসুস ডুবে গিয়েছিল। এখন উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সেটা ধাপ্পা। সূত্রের খবর, শেষ বার জাহাজটি জর্জিয়া থেকে মোজাম্বিকের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। পথে অজ্ঞাত কারণে নিয়ে যাওয়া হয় বেইরুটে। ২০১৩ সালে। গোপনে জাহাজটিকে সেখানেই রেখে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন? বিক্ষোকারীরা আজ এরই ব্যখ্যা চান।
স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, গত মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে মোট ১৫৮ জন মারা গিয়েছে। আহত হয়েছেন ৬ হাজারের বেশি। বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। নাসা বিস্ফোরণ স্থলের কিছু উপগ্রহ-চিত্র প্রকাশ করেছে। যা ক্ষয়ক্ষতি বুঝতে সাহায্য করবে।