বিশ্ববাসীকে এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে একটাই প্রশ্ন। কবে আসবে কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন? বিশ্বের নামজাদা প্রতিষ্ঠানে তাবড় বিজ্ঞানীরা যখন প্রতিষেধকের খোঁজে, আলো দেখাল এক চোদ্দো বছরের কিশোরী। টেক্সাসের ভারতীয় বংশোদ্ভূত কন্যা অনিকা চেবরোলু।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবর, করোনা-সংক্রমণের সম্ভাব্য চিকিৎসা পদ্ধতির সন্ধান দিয়ে ‘২০২০ থ্রিএম ইয়ং সায়েন্টিস্ট চ্যালেঞ্জ’-এ বিজয়িনী অনিকা। সে জিতে নিয়েছে ২৫ হাজার ডলার অর্থপুরস্কারও। ‘ইন-সিলিকো’ পদ্ধতির সাহায্যে একটি অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ তৈরি করেছে অনিকা। এমন একটি সিসার যৌগ আবিষ্কার করেছে সে, যা কি না সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনে জুড়ে গিয়ে তাকে দুর্বল করে দিতে পারে। অনিকা বলে, ‘‘আমি একটি যৌগ তৈরি করেছি। এটা করোনাভাইরাসের নির্দিষ্ট প্রোটিনটিতে জুড়ে যায়। এতে ওই প্রোটিনের কর্মক্ষমতা শেষ হয়ে যায়।’’
অনিকা জানায়, অষ্টম শ্রেণিতে পড়তে-পড়তে সে এই প্রোজেক্টটি জমা দিয়েছিল। গোড়ায় অবশ্য কোভিড-১৯ তার গবেষণার লক্ষ্য ছিল না। বরং ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে স্কুলের ল্যাবে গবেষণা করছিল সে। আমেরিকায় গত বছর ইনফ্লুয়েঞ্জায় ব্যাপক মৃত্যু হয়। তার পরেই এ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে সে। কিশোরীর কথায়, ‘‘অতিমারি, বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ওষুধ আবিষ্কার— এ সব নিয়ে অনেক পড়াশোনার পরে ওই প্রোজেক্টটি শুরু করেছিলাম। এখন ভাবলে অবাক লাগে, নিজেই এই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি।’’ ভারতীয়-মার্কিন স্কুলছাত্রীটি বলে, ‘‘যখন কোভিড-১৯ এল, এত অল্প সময়ে পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হয়ে গেল, তখন আমি আমার মেন্টরের সাহায্য নিয়ে গবেষণার লক্ষ্য করি সার্স-কোভ-২।’’
‘থ্রিএম ইয়ং সায়েন্টিস্ট চ্যালেঞ্জ’-এর অন্যতম বিচারক সিন্ডি মস বলেন, ‘‘অনিকার উৎসাহী মন, অনেক প্রশ্ন, এ সবই ওকে প্রতিষেধক তৈরি নিয়ে আগ্রহ বাড়াচ্ছে।’’ গত একশো বছরে যত আবিষ্কার হয়েছে, তার মধ্যে অনিকার মতে সব চেয়ে সেরা আবিষ্কার— ইন্টারনেট। কেন? প্রশ্ন করতেই কিশোরী বলে ওঠে, ‘‘মাউসে কয়েকটা ক্লিক, আর তাতেই কত কিছু জানা যায়। আমার মতে, ইন্টারনেট তথ্যের রত্নভাণ্ডার। ভাবলে অবাক লাগে, কতটা ব্যাপ্তি এর। ইন্টারনেট ছাড়া আজকের দিনে ভাবা যায়!’’
বিশ্বে করোনা
মৃত
১১,২১,৪৭৪
আক্রান্ত
৪,০৫,৫২,৫৮৪
সুস্থ
৩,০২,৭১,১৯৩
নিজের আবিষ্কার নিয়ে অবশ্য অনিকা মনে করে, গোটা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গতিতে যত সংখ্যক গবেষণা চলছে, সে সবের কাছে তার চেষ্টা, ‘সমুদ্রে এক বিন্দু জলের মতো’। কিন্তু যদি তার সন্ধান দেওয়া যৌগ, করোনাভাইরাসকে রুখতে এতটুকু সাহায্য করতে পারে, তাতেই খুশি কিশোরী। বড় হয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে চায় অনিকা। অধ্যাপনা করতে চায়। তবে আপাতত তার স্বপ্ন, স্কুলের গণ্ডিতে তার ছোট্ট গবেষণা যদি কোনও বড় বদল এনে দিতে পারে বিশ্বে।