—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
অগস্টের শেষ থেকে আমেরিকার বহু প্রদেশেই শুরু হয়ে গেল নতুন শিক্ষাবর্ষ। প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে দেশের বিভিন্ন প্রদেশে নতুন নিয়ম শুরু হয়। এই বছর তেমনই একটি নতুন আইন নিয়ে এল বেশ কিছু প্রদেশ। স্কুলে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়ে কঠোর নিয়ম চালু হল।
২০০৮-’০৯ সালে যখন মোবাইলের বহুল ব্যবহার শুরু হয়, তখন আমেরিকার ৯০ শতাংশের বেশি স্কুলে মোবাইলের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। ২০১৫-’১৬ সাল পর্যন্ত দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ স্কুলে এই নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। কিন্তু এই ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে যায় ২০২১-এর কোভিড-পরবর্তী সময় থেকে, যখন শিক্ষাপদ্ধতি অনলাইনে চলে যায় এবং যখন কম্পিউটারের সঙ্গে ফোনের উপরেও শিক্ষক ও পড়ুয়া, দু’দলেরই নির্ভরশীলতা বাড়ে। কিন্তু শুধু পড়াশোনা নয়, স্কুলের শিক্ষকেরা দেখেছেন, ঘন ঘন মেসেজ বা সামাজিক মাধ্যমের আপডেট দেখা, ভিডিয়ো গেমস খেলা— ক্লাসঘরে পড়ুয়াদের মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এলিমেন্টারি আর মিডল স্কুলের পড়ুয়াদের মোবাইল ব্যবহারের উপরে কিছুটা রাশ টানা গেলেও হাই স্কুলে এই নিয়ম লাগু করা সহজ হচ্ছে না। অতিরিক্ত মোবাইল বা গ্যাজেট-নির্ভরতার ফলে অল্পবয়সিদের মানসিক স্বাস্থ্য এখন গোটা পৃথিবীতেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই কারণেই লস অ্যাঞ্জেলেস ইউনিফাইড স্কুল ডিস্ট্রিক্ট, যা গোটা দেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম, ৫-২ ভোটের মাধ্যমে সমস্ত স্কুলে সেলফোনে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে এবং স্কুলের পড়াশোনায় সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার যথাসম্ভব কম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নতুন শিক্ষা বছরের প্রথম দিন থেকেই কলোরাডো স্প্রিংসের স্কুল ডিস্ট্রিক্ট সম্পূর্ণ পরিকল্পনা মাফিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্কুলে ঢোকার মুখেই শিক্ষার্থীদের মোবাইল নিয়ে নেওয়া হচ্ছে, একটি বিশেষ ধরনের পাউচে তা সংগ্রহ করা হচ্ছে, যেটি ম্যাগনেটিক ভাবে লক হয়ে যায়, এবং দিনের শেষে শিক্ষর্থীরা ফোন সংগ্রহ করে নিচ্ছে। হাইস্কুলের ১৭০০ শিক্ষার্থী এই নতুন ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
একই ধরনের পরিকল্পনা করেছেন আইডাহোর একটি ছোট স্কুল ডিস্ট্রিক্টের সুপারিন্টেনডেন্ট জিম ফাউডি। তাঁর মতে, তাঁর কর্মজীবনের সব থেকে ভাল ‘পলিসি’ স্কুলে মোবাইল ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা। ক্লার্ক কাউন্টি, নেভাডাতেও স্কুলে-স্কুলে ফোন সংগ্রহের জন্য একই রকম পাউচ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইন্ডিয়ানা, লুইজ়িয়ানা, সাউথ ক্যারোলাইনা, ফ্লরিডার মতো প্রদেশগুলি স্কুলে মোবাইল ব্যবহারে দৃষ্টান্তমূলক নিষেধাজ্ঞা এনেছে। নিউ ইয়র্ক, ভার্জিনিয়ার মতো প্রদেশ স্কুলে মোবাইল ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবছে।
কলোরাডো স্প্রিংয়ের হাই স্কুলের প্রিন্সিপাল হিলারি হিন্টনের মতে, তিনি তাঁর ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক সাফল্যের জন্য যা যা প্রয়োজন তাই করতে চান এবং তাদের সাফল্যের যা যা অন্তরায়, তা সরিয়ে দিতে চান। তাই মোবাইলের ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি ছিল। ইংরেজি শিক্ষক এরিন আনফেল্ট বলছেন, ‘‘মোবাইলে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রথম কয়েক দিনেই পড়ুয়াদের হাবভাবে পার্থক্য খেয়াল করছি। আগে ক্লাসের মধ্যে পাঁচ মিনিটের বিরতি থাকলে শিক্ষার্থীরা সঙ্গে সঙ্গে হাতে মোবাইল তুলে নিত। এখন তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলা শুরু করছে, যে পারস্পরিক সংযোগ খুবই প্রয়োজনীয়।’’