আমাজনের জঙ্গলে আগুনের লেলিহান শিখা। ছবি: এএফপি।
ঠিক সাত দিন আগের কথা। গত সোমবার ১৯ অগস্ট সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভারী। ভাবলাম, আজ বেশ মেঘলা। কে জানে, কখন বৃষ্টি শুরু হয়। দুপুরবেলা বাড়িতেই ছিলাম। তিনটে নাগাদ চারদিক পুরো অন্ধকার হয়ে গেল। মনে হল, ঘন কালো মেঘে আকাশ ঢেকে গিয়েছে। এখনই ঝেঁপে বৃষ্টি নামবে। কিন্তু বৃষ্টি আর নামল না!
আমার বাড়ির পরিচারিকা সেই সময়ে এ নিয়ে আমার সঙ্গে রসিকতাও করলেন। বললেন, ‘‘অন্য দিন তুমি আমায় ‘বোয়া তার্দ’ (পর্তুগিজ ভাষায় ‘শুভ দিন’) বলো, আজ কিন্তু বলতে হবে ‘বোয়া নয়েৎ (শুভ সন্ধ্যা)!’’ তখনও জানি না, এ অন্ধকার ঘন মেঘের জন্য নয়! পরের দিন খবরের কাগজ আর টিভি থেকে আসল ঘটনাটা জানতে পারলাম। আমাজন জঙ্গল থেকে তিন হাজার কিলোমিটার দূরে আমাদের এই সাও পাওলো শহর অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল দাবানলের ধোঁয়ায়। গত দু’সপ্তাহে দশ হাজারেরও বেশি নতুন দাবানল শুরু হয়েছে। যার জেরে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে দূর-দূরান্তে। ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে মহাকাশ থেকেও। আকাশ অবশ্য পরিষ্কার হয়ে গেল তার পরেই। শুনলাম, হাওয়ার গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় এ দিকে ধোঁয়ার রাশি ভেসে এসেছিল। হাওয়া আবার অন্য দিকে ঘুরে যাওয়ায় আমাদের আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
২০১৬ থেকে এ দেশে রয়েছি। প্রথম দু’বছর আবহাওয়া বেশ মনোরম ছিল। তবে গত বছর শেষের দিক থেকে কিছুটা পরিবর্তন চোখে পড়ছে। আমাদের সাও পাওলো শহরটা ব্রাজিলের দক্ষিণ পূর্বে। এখানে তাপমাত্রা কখনওই খুব বেশি ওঠেনা— বড় জোর ৩২/৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু গত বছর এখানকার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছিল। ব্রাজিলে গরমকালেই বৃষ্টি বেশি হয়। কিন্তু এ বছর বৃষ্টিও পর্যাপ্ত পরিমাণে হয়নি। জুন থেকে সেপ্টেম্বর এখানে শীতকাল। কিন্তু এ বছর ঠান্ডা প্রায় পড়েনি বললেই চলে। অনেকে বলছেন বৃষ্টি কম হয়েছে বলে ঠান্ডাও কম পড়েছে।
বছরের এই সময়ে আমাজনের বৃষ্টি-বনানীতে দাবানল নতুন কোনও কথা নয়। কারণ এখন আবহাওয়া খুবই শুষ্ক। কিন্তু এ বছর দাবানলের সংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছে যে, সারা পৃথিবী নড়েচড়ে বসেছে। আর আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে অবশেষে তৎপর হতে হয়েছে প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর সরকারকেও। আগুন আয়ত্তে আনতে প্রায় ৪৪ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। শুনলাম, দু’টি সি-১৩০ হারকিউলিস সামরিক বিমান থেকে এক বারে ১২ হাজার লিটার জল ছোড়া যাবে জঙ্গলের উপরে।
সরকারকে আরও পরিবেশ-বান্ধব হতে হবে, এই দাবি তুলে শুরু হয়েছে আন্দোলন। টিভির খবরে দেখলাম, এ দিনও মেক্সিকোয় ব্রাজিল দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সেখানকার স্থানীয় মানুষ। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পোপ ফ্রান্সিসও। তিনি তো প্রতিবেশী আর্জেন্টিনারই মানুষ।