—ফাইল চিত্র।
কখনও জেগে, কখনও ঘুমিয়ে, যুদ্ধ চলছিলই। তেরো বছর পরে ফের ভয়াবহ ভাবে জেগে উঠল ‘আগ্নেয়গিরি’। জঙ্গি গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’-এর নেতৃত্বে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী আলেপ্পো শহর দখল করল বিদ্রোহীরা। প্রেসিডেন্টবাশার আল-আসাদের সরকারকে হটিয়ে আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। শহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অস্ত্রধারী জঙ্গিরা। পরিস্থিতি যে হাতের বাইরে চলে গিয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী। সেই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, শীঘ্রই এর জবাব দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই আসাদের সমর্থনে বিদ্রোহীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এক দিনে হতাহতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। এর ৪৪ জনসাধারণ মানুষ।
হায়াত তাহরির আল-শাম সংক্ষেপে এইচটিএস-এর আগে নাম ছিল নুসরা ফ্রন্ট। আমেরিকা, রাশিয়া, তুরস্ক-সহ আরও বেশ কিছু দেশ এদের জঙ্গি গোষ্ঠী বলে চিহ্নিত করেছে। সিরিয়ার সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, গত কাল হায়াত তাহরিরআল-শামের নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা ঢুকে পড়েছে আলোপ্পো শহরে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, আসাদের সমর্থনে তাদের পাঠানো যুদ্ধবিমান বিদ্রোহীদের ঘাঁটি নিশানা করে হামলা চালিয়েছে। আমেরিকারবিদেশ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, তারাও পরিস্থিতিরউপরে নজর রাখছে। সিরিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র তুরস্কের সঙ্গে কথা বলছে তারা। শোনা যায়, বিদ্রোহীদের একাংশের কাজকর্মে মদত রয়েছে তুরস্কের।
২০১১ সাল থেকে যুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়। সরকার ও বিদ্রোহীদের লড়াই। এই গৃহযুদ্ধে রাশিয়া, আমেরিকার মতো শক্তিরও উপস্থিতি রয়েছে। এ পর্যন্ত কয়েকশো হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে সিরিয়ায়। লাখো মানুষ ঘরহারা। ধ্বংসস্তূপ শহরকে শহর। বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, স্কুল-হাসপাতাল পরিষেবা প্রায় অকেজো। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। বছরের পর বছর আধপেটা খেয়ে কোনও মতে বেঁচে আছেন সাধারণ মানুষ। রাশিয়া ও ইরানের সাহায্যে বেশ কয়েক বছর হল সিরিয়ার বেশির ভাগ অংশ আসাদ সরকারের হাতে ফিরে এসেছিল। কিছুটা শান্ত হয়েছিল দেশ। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে যুদ্ধের কোনও ইতি হয়নি। ২০১৬ সালের একটি জয়ের পর থেকেআলেপ্পো পুরোপুরি আসাদ-সরকারের হাতে আসে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীর এক সদস্য আল জুমা বলেন, ‘‘আমি আলেপ্পোর ছেলে। আট বছর আগে, ২০১৬ সালে নিজের ঘর হারিয়েছিলাম। ঈশ্বরের কৃপায় ঘরে ফিরতে পেরেছি। অবর্ণনীয় অনুভূতি।’’
বেশ কিছু ছবি ছড়িয়েছে ইন্টারনেটে। তাতে দেখা গিয়েছে, আলেপ্পোর সাদাল্লা আল-জাবিরি স্কোয়ারে ভিড় করেছে বিদ্রোহীরা। পিছনে জ্বলজ্বল করছে আসাদের ছবি-সহ বিলবোর্ড। আবার অন্য একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, প্রেসিডেন্টের প্রয়াত ভাই বাসিল আল-আসাদের ভেঙে ফেলা মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে এক দল লোক। ট্রাকে করে শহর পরিক্রমা করছে বিদ্রোহীরা, রাস্তায় রাস্তায় স্লোগান তুলছে।
সিরিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, একের পর এক হামলা চালাচ্ছে বিদ্রোহীরা। তারাআলেপ্পো বিমানবন্দর দখল করে নিয়েছে। দু’টি বিদ্রোহী গোষ্ঠীদাবি করেছে, আলেপ্পো ছাড়াও আশপাশের বেশ কিছু অঞ্চলতাদের দখলে। যেমন ইদলিব প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর মারাত আল নুমান-ও দখল করেছে বিদ্রোহীরা। সিরিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের সশস্ত্র বাহিনীর অবস্থান ও যুদ্ধের নকশা নতুন করে সাজাতে হচ্ছে।