অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড কেলেঙ্কারির দালাল ক্রিশ্চিয়ান মিশেল। —ফাইল চিত্র
অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড চপার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ব্রিটিশ দালাল ক্রিশ্চিয়ান মিশেলকে দুবাই থেকে ভারতে ফেরানো হল। গত মাসেই সেখানকার শীর্ষ আদালত প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে মিশেলের যাবতীয় যুক্তি খারিজ করে দিয়েছিল। তার পরেই আজ ঘুষের লেনদেনে অভিযুক্তকে ভারতে পাঠাতে সরকারি আদেশ জারি করে দুবাই। রাতে মিশেলকে আজ রাতেই ভারতে আনা হয়। এর পরেই অগুস্তা কেলেঙ্কারিতে তাঁর ভূমিকা খতিয়ে দেখবে দিল্লির আদালত। এই মামলায় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের নাম জড়ানোয় বিধানসভা ভোটের সময়ে মিশেলকে ভারতে ফেরানো নিয়ে উৎসাহিত বিজেপি।
আজ রাতে বেনজির ভাবে সিবিআই দাবি করেছে, ক্রিশ্চিয়ানকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তিনি গোটা বিষয়টির দেখভাল করেছেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, অলোক বর্মাকে ছুটিতে পাঠানোর পরে ডোভালই কি বকলমে সিবিআইয়ের কাজ চালাচ্ছেন? সিবিআইয়ের বিবৃতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিরেক্টর এম নাগেশ্বর রাওয়ের ভূমিকার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি পুরো অভিযানটিতে সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন। সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর এ সাই মনোহরের নেতৃত্বে একটি দল দুবাই পৌঁছেছিল। ক্রিশ্চিয়ানকে ফেরাতে এই দলটিও কাজ করেছে।
দুবাইয়ে মামলা লড়ার সময়ে মিশেল দাবি করেছিলেন, বিচারের জন্য তাঁকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হলে দুর্নীতি মামলায় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম জড়ানোর জন্য চাপ আসতে পারে। তাঁর আইনজীবী দাবি করেন, মামলায় সনিয়া গাঁধীকে জড়াতে তাঁর মক্কেলকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও মন্তব্য করেন, ‘‘মিশেলকে হাতে পেলে ভারতে কয়েক জন রাজনীতিকের অস্বস্তি বেড়ে যাবে।’’ তবে মিশেল এত দিন দাবি করে এসেছেন, ঘুষ কাণ্ডের প্রমাণ হিসেবে তদন্তকারী সংস্থা যে ডায়েরির কথা তুলছেন, সেটি তাঁর লেখা নয়। সেখানে ‘এ পি’ কিংবা ‘ফ্যামিলি’-র কথা কে, কী জন্য লিখেছে, তা-ও জানেন না। আদালতে মিশেল জানান, ভারতের জেলগুলির পরিস্থিতি ভাল নয়। সেখানে অমানবিক আচরণের সম্ভাবনা থাকছে। কিন্তু দুবাইয়ের আদালত ব্রিটিশ দালালের যাবতীয় যুক্তি খারিজ করে জানায়, প্রত্যর্পণের আর্জির সঙ্গে রাজনৈতিক, ধর্মীয় কিংবা জাতিগত বিষয় জড়িয়ে নেই।
আরও পড়ুন: ‘পরিবেশ-যুদ্ধে বেদই অনুপ্রেরণা’ মোদী-বার্তায় মুগ্ধ গুতেরেস
ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপিদের জন্য চপার কিনতে ২০১০ সালে ব্রিটিশ সংস্থা অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করেছিল ইউপিএ সরকার। ৩৬০০ কোটি টাকার চুক্তিতে ১২টি চপার কেনার কথা হয়। কিন্তু ২০১৩-য় অভিযোগ ওঠে, এতে ঘুষের লেনদেন হয়েছে। প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এস পি ত্যাগীর নাম জড়িয়ে যায়। পরে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি। তদন্তে উঠে আসা তিন দালালের মধ্যে মিশেল এক জন। বিতর্কের মুখে পরে অগুস্তা চুক্তি বাতিল করে মনমোহন সরকার।