প্রতীকী ছবি।
, ১৩ ফেব্রুয়ারি: নিজের পছন্দে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা চাই। দাবি শুধু এটুকুই। আর এই দাবি নিয়েই সপ্তাহান্তে ফের উত্তাল কানাডার রাজধানী শহর। কোভিড টিকা আবশ্যিক করা হয়েছে এ দেশে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, যাঁদের ইচ্ছে হবে, তাঁরা টিকা নেবেন। কিন্তু কারও উপরে নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। তাই, রাস্তায় নেমেছেন তাঁরা। হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘ফ্রিডম অব চয়েস’।
গত তিন সপ্তাহ ধরে শনি-রবির ছুটিতে বিক্ষোভের ঢল নামছে অটোয়া শহরে। এই শহর দিয়েই বিক্ষোভ শুরু হলেও তার আঁচ পড়েছে মন্ট্রিয়ল বা অন্য শহরেও। টিকা নেওয়া না-থাকলে আমেরিকা থেকে ট্রাক চালকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না কানাডায়। এর প্রতিবাদে মিছিলে নেমেছেন ট্রাক মালিকেরাও। কানাডায় প্রচুর লোক চাকরি হারিয়েছেন, শুধুমাত্র টিকা না নেওয়ার জন্য। কিন্তু কাজ হারিয়েও এই অংশ টিকা নিতে অনাগ্রহী। তাঁদের বক্তব্য, নিজের পছন্দ মতো বাঁচার অধিকার সকলের আছে।
যেমন স্কট হল্ট। ৫৮ বছর বয়সি এই প্রৌঢ় কাজ হারিয়েছেন সম্প্রতি। ট্রাক চালাতেন। কোভিড-বিধিতে কাজ চলে গিয়েছে। সরকারি নিয়ম, ট্রাক চালকদের হয় ভ্যাকসিন নিতে হবে, নয়তো আমেরিকা-কানাডা সীমান্ত পেরনোর পরে করোনা পরীক্ষা করিয়ে নির্দিষ্ট সময় বিচ্ছিন্নবাসে থাকতে হবে। স্কট বলেন, ‘‘এই করোনা-বিধির জন্য জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।’’ তবে কেন তিনি কোভিড টিকা নিচ্ছেন না, সে প্রশ্নের উত্তর দেননি স্কট। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাধীনতা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’’
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বাসভবনের সামনে দু’সপ্তাহ ধরে ধর্নায় বসে আছেন জুলি চাপাডোজ়। ৪৯ বছর বয়সি এই শিক্ষিকা একটি হোটেলে উঠেছেন। সেখানে থেকে দিনের বেলা ল্যাপটপে ক্লাস করিয়ে যাচ্ছেন। আর রাত হলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে ধর্নাস্থলে
ঘুমোতে যাচ্ছেন।
আর এক বিক্ষোভকারীর কথায়, ‘‘আমরা সবাই এই সব নিয়ম মানতে মানতে ক্লান্ত। আর কিছু হারানোর নেই।’’ এখনও টিকার একটি ডোজ়ও নেননি এই বিক্ষোভকারী।
গোটা বিশ্বে ৫৮ লক্ষের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন করোনায়। কানাডায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫ হাজার বাসিন্দার। কিন্তু তা-ও এ দেশের একাংশ প্রাকৃতিক ভাবে ইমিউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনে বিশ্বাস করেন। তাঁরা টিকা নিতে চান না। কেউ কেউ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভয় পাচ্ছেন। অনেকে আবার গোটা বিষয়টিতে রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র দেখছেন। অনেকেরই বক্তব্য, কঠিন করোনা-বিধির জন্য তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। টিকা নেওয়া নেই বলে বাড়ির প্রবীণ সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। টিকাহীনদের কার্নিভাল থেকে মুদির দোকান, কোথাও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। টিকা না নেওয়ায় অনেককে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
ফ্রান্সেও টিকা-বিরোধী ক্ষোভ তৈরি হতে শুরু করেছে। এ দেশেও একাংশ টিকার বিরোধী। এ বছর ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। মাঝে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় চিন্তায় পড়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, টিকা নিতে হবে সকলকে। না-হলে জীবন দুর্বিসহ করে দেওয়া হবে। বাস-ট্রামে ওঠা থেকে রেস্তরাঁয় ঢুকতে গেলেও টিকা নেওয়া থাকতে হবে এ দেশে। ভ্যাকসিন-পাস চালু করেছে সরকার। কাল থেকে প্যারিসে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। কানাডার দেখাদেখি ‘ফ্রিডম কনভয়’ তৈরি হয়েছে ফ্রান্সেও। গাড়ি, ভ্যান, ট্রাক নিয়ে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হন প্যারিসে। পরিস্থিতি সামলাতে শেষে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয় পুলিশকে। শয়ে শয়ে লোকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ৫৪ জনকে। শঁজ়ে লিজ়ে অ্যাভিনিউয়ে ঢুকে রাস্তা অবরোধ করে শ’খানেক গাড়ি। এ সময়ে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে বাধ্য হয় পুলিশ।