সাত হাজার! সংস্কারের হিসেবে ধন্দ

আর সাত হাজার সংস্কার? এই হিসেব নিয়ে মুখে কুলুপ শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের। কে বা কারা এই অঙ্ক কষে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছে, তারও উত্তর নেই। প্রশ্ন উঠেছে, তিন বছরের মোদী জমানায় যত সিদ্ধান্ত হয়েছে, যত ফাইলে সই হয়েছে, সব যোগ করেও কি ৭ হাজার সংখ্যাটা হবে?

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ০৪:০৫
Share:

তিন বছরে ৭ হাজার আর্থিক সংস্কার! হিসেব কষলে, বছরে গড়ে ২৩৩৩টিরও বেশি। দৈনিক গড়ে অন্তত ৬টি!

Advertisement

আমেরিকা সফরে গিয়ে শিল্পপতিদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে রবিবার এমনই সাফল্যের খতিয়ান পেশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তার পরেই প্রশ্ন উঠেছে, এত আর্থিক সংস্কার মোদী করলেন কবে? কী ভাবে? এই হিসেব খুঁজে পেলেন কোথায়? কোথা থেকে গোণা শুরু করলেন? কোথায়ই বা শেষ করলেন?

ওয়াশিংটনে সিইও-দের সামনে রবিবার মোদী বলেছেন, ‘‘গোটা বিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। শুধু মাত্র ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য ৭ হাজার সংস্কার হয়েছে।’’

Advertisement

বাস্তব হল, ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরির মাপকাঠিতে বিশ্ব ব্যাঙ্কের তালিকায় ভারত মোদী জমানায় এগোয়নি, বরং পিছিয়েছে। ১৯০টি দেশের তালিকায় ভারত এখন ১৩০-তম স্থানে। ২০১৬ থেকে ২০১৭— মাত্র এই এক বছরেই ভারত চার ধাপ পিছিয়েছে। ২০১৮-তেও যে ভারত এক লাফে প্রথম একশোয় ঢুকে পড়বে, তেমন আশা করছে না শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রক।

আর সাত হাজার সংস্কার? এই হিসেব নিয়ে মুখে কুলুপ শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের। কে বা কারা এই অঙ্ক কষে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছে, তারও উত্তর নেই। প্রশ্ন উঠেছে, তিন বছরের মোদী জমানায় যত সিদ্ধান্ত হয়েছে, যত ফাইলে সই হয়েছে, সব যোগ করেও কি ৭ হাজার সংখ্যাটা হবে?

আরও পড়ুন: জাঁকজমক কম, তবে পাকিস্তান নিয়ে কড়া বার্তা

অর্থ মন্ত্রকের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ ভিরমানি বলেন, ‘‘বোধহয় বিভিন্ন আইন, নিয়মকানুনে যে সব ছোট-বড় বদল হয়েছে, সে সবও এই হিসেবে ধরা হয়েছে। যেমন, ১১৬০টি অকেজো আইন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। যেমন, নথির নকলে এখন কেউ নিজেই অ্যাটেস্টেশন করতে পারেন। সেগুলোও হয়তো সংস্কারের মধ্যে ধরা হয়েছে।’’

মোদী যে সব সংস্কার নিয়ে সাফল্য দাবি করেন, তার মধ্যে অবশ্যই জিএসটি প্রথম স্থানে। তার সঙ্গে রয়েছে জন ধন প্রকল্পে সকলের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, প্রায় সব লেনদেন এবং প্রায় সব কাজে আধার বাধ্যতামূলক করা, নগদে ভর্তুকি চালু, দেউলিয়া আইন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে অনেকগুলিই পূর্বতন ইউপিএ সরকারের আমলের প্রকল্প। যা মনে করিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সূর্যেওয়ালার কটাক্ষ, ‘‘জিএসটি, আধার, নগদে ভর্তুকি— এ সব তো ইউপিএ আমলের প্রকল্প। সে সময় মোদীর দলই এ সবে বাগড়া দিয়ে আটকে দিয়েছিল। এখন মোদী সে সব নিয়েই বড়াই করছেন!’’

নোট বাতিলকে তাঁর সবথেকে বড় আর্থিক সংস্কার হিসেবে দাবি করেছিলেন মোদী। তার কুফল দেখা গেলেও তেমন কোনও সুফল এখনও চোখে পড়েনি। বিরোধীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মহলেও মোদীর ‘সংস্কারক’ ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে। যে সব আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকা তিন বছর আগে মোদীর সুখ্যাতি করত, এখন তারাই মোদীর সমালোচনায় মুখর। কংগ্রেসের এক নেতার কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বোধহয় জেট-ল্যাগের জেরে সাত বলতে গিয়ে সাত হাজার বলে ফেলেছেন!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement