১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন হস্তক্ষেপ করায় তাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়েছিল মুজাহিদিন সংগঠন। মুজাহিদিনের যে সমস্ত ছাত্র এই লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের বলা হত তালিব। সেই থেকেই তালিবানের উৎপত্তি। সোভিয়েতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল এই তালিবদেরই।
সে সময়ে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধের নিরসন করতে তালিবানের নেতা ঘোষণা করা হয়েছিল মোল্লা মহম্মদ ওমরকে। মুজাহিদিনকে সরিয়ে সারা দেশে তালিবান-রাজ কায়েম হয়েছিল ওমরের হাত ধরে। পরবর্তীকালে একে একে অনেক নেতা নেতৃত্ব দিয়েছেন তালিবান সংগঠনকে।
৯/১১-এর হামলার পর প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশ আমেরিকা আফগানিস্তানের বুকে সেনা নামিয়ে দিয়েছিল ২০০১ সালে। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কোটি কোটি ডলার খরচ করে দেশের ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধ শেষ করে অবশেষে খালি হাতেই আফগানিস্তান থেকে ফিরতে হয়েছে আমেরিকাকে। কূটনীতিবিদদের মতে, তালিবানদের সঙ্গে যুদ্ধে একপ্রকার হার স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে আমেরিকা।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমর ছাড়া এই দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধে আমেরিকাকে পিছু হঠতে বাধ্য করার পিছনে তালিবান সংগঠনের আর যে সমস্ত নেতৃত্বের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে, তাঁদের চিনে নিন।
হাইবাতুল্লা আখুনজাদা: সংগঠনের রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামরিক বিষয়ক যাবতীয় কাজকর্ম দেখভালের ভার সামলান। তাঁকে ‘বিশ্বস্ত নেতা’ বলে সম্বোধন করা হয়। ২০১৬ সালে আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে আমেরিকার সেনার হাতে আখতার মনসৌরের মৃত্যুর পরই এই গুরুদায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর উপর। তার আগে পর্যন্ত কুচলাক নামে এক শহরের মসজিদে ধর্মীয় শিক্ষা দিতেন তিনি।
মোল্লা মহম্মদ ইয়াকুব: তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমরের ছেলে তিনি। সংগঠনের যাবতীয় সামরিক কাজকর্ম দেখেন। তাঁর আনুমানিক বয়স ৩০ বছর। বাবার মৃত্যুর পর প্রথমে নাকি তাঁকেই সংগঠনের নেতা ঘোষণা করা হয়েছিল কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে অভিজ্ঞতা কম থাকায় তিনি নিজেই এই পদ থেকে সরে এসেছিলেন।
সিরাজউদ্দিন হক্কানি: সংগঠনের অর্থনৈতিক বিষয়ক যাবতীয় খুঁটিনাটি দেখার ভার তাঁর উপর। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে অত্যাধুনিক অস্ত্রের আমদানিও নিয়ন্ত্রিত হয় তাঁর নির্দেশে। হক্কানির বিরুদ্ধে একাধিক জঙ্গি কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে। মধ্যবয়সি এই নেতা পাকিস্তানে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন বলে গুপ্তচরদের অনুমান।
মোল্লা আব্দুল গনি বরাদর: এই মুহুর্তে তালিবানের মুখ তিনিই। কাবুলে দখল নেওয়ার আগে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির সঙ্গে মৌখিক বৈঠক করেছিলেন তিনিই। এক সময়ে মোল্লা ওমরের ডান হাত ছিলেন আব্দুল গনি।২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচিতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়ার পর ফের তালিবান নেতা হয়ে ক্ষমতায় ফেরেন।
শের মহম্মদ আব্বাস: তালিবানের কাতার অফিসের প্রধান তিনি। ২০১৫ সাল থেকে এই পদে রয়েছেন। আফগান সরকারের সঙ্গে বৈঠকে তিনিও অংশ নিয়েছিলেন। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বৈঠকের সময়ও তালিবানের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন তিনি।
আব্দুল হাকিম হক্কানি: তালিবান নেতা হাইবাতুল্লা আখুনজাদার অন্যতম বিশ্বস্ত পাত্র তিনি। আফগানিস্তানে তালিবান-রাজ প্রতিষ্ঠা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন তিনিও।