ফাইল চিত্র।
সন্ত্রাস-বিধ্বস্ত একটা দেশ গত তিন মাস হল তালিবানের দখলে। আগের সরকারকে উচ্ছেদ করে অগস্ট মাসে ফের আফগানিস্তান দখল করেছে তালিবান। নিজেদের ‘সরকার’ হিসেবে ঘোষণা করেছে তারা। কিন্তু তালিবান সরকারকে মান্যতা দেয়নি আমেরিকা-ব্রিটেন-সহ বেশির ভাগ দেশই। অর্থ ও ত্রাণসাহায্য পাঠানোও বন্ধ করে দিয়েছে তারা। ফলে বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল আফগানিস্তান ক্রমে আরওই দারিদ্রে ডুবছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের আশঙ্কা, এ ভাবে চললে অচিরেই দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে এ দেশে।
আমেরিকার সেনাবাহিনী আফগানিস্তার ছাড়ার পর বহু মানুষ সে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কেউ কেউ সফল হন, ব্যর্থ হন অনেকেই। এর পর থেকেই দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘ খরার জেরে ফসলের ফলনও ভাল হয়নি। ফলে খাদ্যাভাব চরমে। রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, শীঘ্রই খরা-দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি দেখা দেবে এ দেশে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন’ (এফএও) জানিয়েছে, জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ বাড়ছে। এ দিকে অর্থাভাব জাঁকিয়ে বসছে। এফএও-র আফগান প্রতিনিধি রিচার্ড ট্রেনচার্ড বলেন, ‘‘ভয়ানক পরিস্থিতি। কৃষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রায় সকলেই তাঁদের সব শস্য হারিয়েছে। অনেকে গৃহপালিত পশু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে। তাঁদের ঘাড়ে এখন বিশাল ঋণের বোঝা। হাতে কানাকড়িও নেই। ধারদেনা করে কোনও মতে সংসার চালাচ্ছেন।’’
রিচার্ড আরও বলেছেন, ‘‘কোনও চাষিই তাঁদের জমি ছেড়ে যেতে চাইছেন না। কিন্তু তাঁদের কাছে খাবার নেই। আগের বারের ফলনের একটি দানাও বেঁচে নেই। ফসল ফলানোর জন্য প্রয়োজনীয় বীজ নেই। গৃহপালিত পশুও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এ অবস্থায় তো সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই।’’
রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে ১ কোটি ৮৮ লক্ষ আফগান রোজকারের খাবার জোগাড় করতে পারছেন না। এ বছর শেষ হওয়ার মধ্যে অন্তত ২ কোটি ৩০ লক্ষ আফগান দারিদ্রে ডুববে। শহরগুলোর উপরে চাপ বাড়ছে। বাসিন্দাদের সঞ্চয় ফুরোচ্ছে ও ঋণের বোঝা বাড়ছে। এফএও-র আশঙ্কা, ২০২২ সালে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে আফগানিস্তানে।
তবে উপায় কী?
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ‘‘আফগানিস্তানের কৃষকদের বীজ দিতে হবে, সার দিতে হবে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম মারফত খাবারের জোগান দিতে হবে। তবে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন... নগদ অর্থ।’’
আফগানিস্তানের মেরুদণ্ড মূলত কৃষিকাজ। এ দেশের অর্থনীতিও কৃষির উপরে নির্ভরশীল। এ দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ বাস করেন গ্রামীণ এলাকায়। তাই প্রায় ৮০ শতাংশেরই পেশা চাষবাস ও পশুপালন। ফলে দীর্ঘ খরার জেরে এই মরসুমে মানুষের হাতে খাবার নেই। সামনের মরসুমে ফসল ফলানোর জন্য বীজও নেই। আপাতত সাহায্যের আশায় গোটা বিশ্বের দিকে তাকিয়ে আফগানিস্তান।