প্রতীকী ছবি।
আল্লা হো আকবর। আফগান সেনাবাহিনী হেরাট শহরের প্রান্ত থেকে তালিবান বাহিনীকে পিছু হটাতেই এই ধ্বনি তুললেন নগরবাসী। রাতভর বাড়ির ছাদে উঠে লড়াই দেখেছেন তাঁরা। প্রবল আতঙ্ক— কখন বুঝি বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ে! কিন্তু মনের কোণে আশা, শেষ পর্যন্ত তালিবানকে কিছুতেই হেরাটের দখল নিতে দেবে না আশরফ গনির সেনা। শেষ পর্যন্ত হলও তাই। তালিবান শহরের প্রান্ত থেকে সরে যাওয়ার পরে তাই গলা ছেড়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালেন তাঁরা। অবশেষে স্বস্তি।
বলা ভাল, আপাতত স্বস্তি। কারণ দেশের পশ্চিম প্রান্তের হেরাট প্রদেশের অনেকটাই এখন তালিবানের দখলে চলে গিয়েছে। এই প্রদেশের প্রান্তে ইরান সীমান্তও এখন তালিবানের দখলে। প্রাদেশিক রাজধানী হেরাট শহরের চারপাশে লড়াই চলছিল বেশ কয়েক দিন ধরেই। আমেরিকার সাহায্য নিয়ে আকাশপথে তালিবানের উপরে হামলা চালিয়ে এখন কিছুটা এগিয়ে আফগান বাহিনী। তবে আজ কিছুটা পিছু হটলেও এই শহরটি দখল করতে তালিবান যে আবার প্রাণপণ ঝাঁপাবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
দেশের অন্যান্য এলাকায় পরিস্থিতিটা অবশ্য এতটা আশাপ্রদ নয়। খাস কাবুলের অভিজাত এলাকা শেরপুরে এক শক্তিশালী বিস্ফোরণে ১০ জন আহত হয়েছেন। কার্যনির্বাহী প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লা খান মহম্মদির গেস্টহাউসই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। মন্ত্রী এবং তাঁর পরিবার অবশ্য অক্ষত রয়েছেন।
কন্দহর এবং লস্কর গা-র পরিস্থিতিও ভয়াবহ। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, দক্ষিণে হেলমন্দ প্রদেশের লস্কর গা শহরটি পুরোপুরি তালিবানের দখলে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে অন্তত ৪০ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আফগান আর্মি কোরের ২১৫ নম্বর বাহিনীর জেনারেল সামি সাদাত আজ দুপুরে এক বিবৃতি দিয়ে মানুষকে আর্জি জানান, তাঁরা যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শহর ছেড়ে চলে যান। সেনাকর্তার কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষ শহর ছেড়ে গেলে আমরা তালিবানের উপরে জোরদার হামলা চালাতে পারব।’’ লস্কর গা-তে অন্তত দু’লক্ষ মানুষের বাস। এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তাঁরা শহর ছেড়ে কোথায়, কী ভাবে যাবেন, তার কোনও দিশা অবশ্য জেনারেলের কথায় ছিল না। রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, তালিবান যত দেশের জনবহুল শহরগুলির দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠছে, ততই আফগান বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাড়ছে এবং এই সংঘর্ষে প্রাণ যাচ্ছে বহু সাধারণ মানুষের, যার সঠিক পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই।
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র ফাওয়াদ আমনের অবশ্য দাবি, হেলমন্দ প্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আকাশপথে হামলা চালিয়ে অন্তত ৭৫ জন তালিবান জঙ্গিকে মেরেছে আফগান সেনা। নিহতদের মধ্যে তিন তালিবান শীর্ষ নেতাও রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। জখম ২২ তালিবান। আমনের কথায়, ‘‘বিভিন্ন তালিবান ঘাঁটির উপরে আমরা ক্রমাগত হামলা চালিয়ে সেখানকার তালিবান বাহিনীকে কাবু করতে অনেকটাই সফল হয়েছি।’’
এ দিকে, আফগানিস্তানে তালিবান আবার ক্ষমতা পেলে যদি সেখানে দেশি-বিদেশি জঙ্গি সংগঠন ঘাঁটি গেড়ে বসে, তা ভারতের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে, জানিয়েছে দিল্লি। আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে এই মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের বিশেষ দূত টি এস তিরুমূর্তি। আফগান বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে আজ কথা হয়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের। তবে তিরুমূর্তির মতে, আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে শুধু সে দেশের অভ্যন্তরে নয়, দেশের বাইরেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। কূটনৈতিক মহল বলছে, এই কথার তির পাকিস্তানের দিকেই।