যোদ্ধার পোশাকে।
তিনি যোদ্ধা। আমেরিকার সশস্ত্র বাহিনীর হয়ে তিনি যুদ্ধ করেছেন আগেই। ১১ জুন, শনিবার রাতে তিনি আবার একটা যুদ্ধ করলেন। তবে এ বার আর আমেরিকার বাহিনীর হয়ে নয়, শুধু আমেরিকার হয়ে। কিন্তু যুদ্ধ যার হয়েই করুন, তাঁর সব যুদ্ধেই বার বার জড়িয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান। ফিরে ফিরে আসছে কোনও আফগান যোগ।
তিনি ইমরান ইউসুফ। ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্ব এখন জেনে গিয়েছে তাঁর নাম। অরল্যান্ডোর নাইট ক্লাবে তিনি যেন সাক্ষাৎ যমের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন ৭০টি প্রাণ। মার্কিন মিডিয়াতে তো বটেই, বিশ্বজুড়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাঁর ইমরান ইউসুফের নামে জয়ধ্বনি চলছে। ইউসুফ নিজে অবশ্য এখনও পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারছেন না সে রাতের ভয়ঙ্কর স্মৃতি ছেড়ে। বার আফশোস করছেন, আরও অনেককে বাঁচাতে পারা উচিত ছিল। কিন্তু পারেননি।
আরও একটা ধাঁধা খেলে বেড়াচ্ছে ইমরান ইউসুফের মাথায়। তাঁর যে কোনও যুদ্ধে বার বার আফগানিস্তান জড়িয়ে যায় কেন?
মার্কিন নৌসেনায় কাজ করতেন ইমরান ইউসুফ। ভাই আমিরও নৌসেনায় ছিলেন। দুই ভাই-ই যুদ্ধে গিয়েছেন— আফগানিস্তানের যুদ্ধে। তালিবান শাসন হঠিয়ে আফনাগিস্তানে গণতন্ত্র পেরানোর জন্য যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল আমেরিকা, সেই যুদ্ধে অংশ নিতে আফগানিস্তান গিয়েছিলেন ইউসুফরা।
আফগানিস্তান থেকে ফেরার পর মার্কিন নৌসেনা থেকে অবসর নেন ইউসুফ। তার পর কাজ শুরু করেছিলেন অরল্যান্ডোর নাইট ক্লাব পাল্স-এ। বাউন্সার হিসেবে। এখানেও সেই রক্ষীর ভূমিকা। কিন্তু আবার একটা যুদ্ধে জড়াতে হবে কখনও ভাবেননি। আবার গোলাগুলির মুখোমুখি হতে হবে বা আবার পোড়া বারুদের উগ্র গন্ধ আর আগুনের ঝলকানির মাঝে রাত কাটবে, দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করেননি।
শনিবার রাত ২টো নাগাদ যখন নাইট ক্লাবে ঢুকে সবে চার-পাঁচটা গুলি চালিয়েছে ওমর মতিন, তখনই যোদ্ধা ইউসুফ বুঝে গিয়েছিলেন, অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চলছে। লোকজন ডান্স ফ্লোর ছেড়ে পিছনের হলওয়ের দিকে ছুটছিলেন। সে দিকেই ছিলেন ইউসুফ। হলওয়ের দিকে যাঁরা আসছিলেন, তাঁদের সবাইকে ঢুকিয়ে নেওয়ার পর দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিলেন ইউসুফ। যাতে কিছুক্ষণ আটকে রাখা যায় আততায়ীকে। সেই সময়টুকুর মধ্যে হলওয়ের বাইরে বেরিয়ে পিছনের দরজা খুলে দিয়ে সবাইকে বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা করে দিয়েছিলেন ইউসুফ। পিছনের দরজাটা খোলা না গেলে আমেরিকার ইতিহাসে ভয়ঙ্করতম বন্দুকবাজির ঘটনা আরও বীভৎস চেহারা নিত সন্দেহ নেই।
রবিবার সকালেও আতঙ্কের রেশ গনগনে। ইউসুফ তখনও বোধ হয় নিজেকেই জিজ্ঞাসা করছিলেন, আরও বেশি মানুষকে কেন বাঁচাতে পারলেন না। তার মাঝেই চমকে উঠলেন সেই সকালে সদ্য সামনে আসা একটা তথ্যে— আততায়ী ওমর মতিন আফগান বংশোদ্ভুত! ওমর মতিনের বাবা সিদ্দিকি মতিন তালিবানের সমর্থক এবং আমেরিকা থেকে সম্প্রচারিত আফনাগ টেলিভিশন চ্যানেলের অ্যাঙ্কর!
জবাবটা এখনও খুঁজছেন ইউসুফ— আফগানিস্তান কেন বার বার যুদ্ধ নিয়ে ফিরে আসছে তাঁর জীবনে?
আরও পড়ুন: ৭০ জনকে বাঁচিয়ে ইমরান এখন অরল্যান্ডোর নায়ক