ছবি সংগৃহীত।
কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে তখন চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল অবস্থা। ১৯ অগস্টের কথা। চার দিন আগেই তালিবানের সামনে ‘পতন’ হয়েছে কাবুলের। কাতারে কাতারে লোক দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। স্ত্রী ও পাঁচটি শিশুসন্তান নিয়ে মির্জা আলি আহমেদিও প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, কোনও ভাবে যাতে বিমানবন্দরে ঢোকা যায়। কিন্তু হাজার হাজার লোকের মধ্যে কী ভাবে কী করবেন, কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সব থেকে ভয় হচ্ছিল, কোনও ভাবে যদি দু’মাসের ছোট্ট সোহেল হাত ফস্কে ভিড়ের মধ্যে পড়ে যায়। তখনই প্রাচীরের ও-পার থেকে এগিয়ে আসে দেবদূতের মতো একটি হাত। কোনও এক অজানা আমেরিকান সেনার। তাঁর হাতে শিশুপুত্রকে তুলে দিয়েছিলেন আহমেদি। ভেবেছিলেন, কয়েক ফুট দূরেই তো বিমানবন্দরের ফটক। ভিতরে ঢুকে পড়তে পারলেই ফেরত পেয়ে যাবেন একরত্তিকে।
ভুল ভেবেছিলেন। আধঘণ্টা পরে বিমানবন্দরে ঢুকে আর ছেলেকে খুঁজে পাননি তাঁরা। তত ক্ষণে শরণার্থীদের বিমানে তুলে দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। জার্মানি হয়ে এখন আহমেদিদের ঠিকানা আমেরিকা। ছেলের খোঁজে হন্যে হয়ে দফতরে দফতরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, শিশুটি নিশ্চয় পশ্চিমের কোনও দেশের শরণার্থী শিবিরে রয়েছে। সোহেলের ছবি-সহ পোস্টার দিয়ে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়, খোঁজ মিলবে।
এই আশ্বাসে মন মানছে না আহমেদি বা তাঁর স্ত্রী সুরায়ার। এমন একটা দিনও যায় না, যে দিন হারিয়ে যাওয়া ছেলের জন্য চোখের জল ফেলেন না সুরায়া। এমন একটা দিনও যায় না, যে দিন প্রতিরক্ষা দফতরের কোনও অফিসে গিয়ে আহমেদি কাতর গলায় জিজ্ঞাসা করেন না, ‘খোঁজ মিলল?’