ছবি: রয়টার্স
তালিবানের কাবুল দখল তখন ছিল সময়ের অপেক্ষা। প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে উজ়বেকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। আতঙ্কে ছিলেন, ইংরেজি জানেন ও বিমান চালাতে পারেন বলে তালিবান মেরে ফেলবে তাঁদের। উজ়বেকিস্তানের শিবিরে আশ্রয় নেওয়া সেই সব আফগান বিমানচালকেরা এ বার দেশে ফিরবেন বলে জানা গিয়েছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পাইলট উজ়বেকিস্তান ছেড়ে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এঁরা সকলেই দেশে ফিরে আসবেন বলে মনে করা হচ্ছে।দেশ ছেড়ে পালানো এই সব পাইলটকে এক সময়ে বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছিল আমেরিকা। তালিবান যখন রাজধানী কাবুলের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে, তখন অনেকগুলি বিমান নিয়ে উজ়বেকিস্তান পালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তালিবান নেতৃত্ব এখন চাইছেন, ওই সব পাইলট যেন দেশে ফিরে আসেন। সেই সঙ্গে বিমানগুলিও ফেরত চাইছেন তাঁরা। বিমানচালকদের তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁদের কোনও ক্ষতি করা হবে না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আফগান পাইলট সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাঁরা এখনও যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছেন।
আমেরিকার বিদেশ দফতর বা নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের উজ়বেক মিশন এখনও এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তালিবান নেতৃত্বও কোনও বিবৃতি দেননি। তবে জানা গিয়েছে, উজ়বেকিস্তানের শিবিরে আফগান পাইলটরা চরম অশান্তিতে ছিলেন। প্রাণভয়ে কার্যত এক কাপড়ে দেশ ছাড়া এই সব পাইলট ঠিক মতো খাবার পাচ্ছিলেন না, পাচ্ছিলেন না ওষুধ বা পোশাকও। তাঁদের স্বাধীন ভাবে চলাফেরার অনুমতিও দেওয়া হয়নি সে দেশে।
ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার-সহ মোট ৪৬টি বিমান আফগানিস্তান থেকে উজ়বেকিস্তান নিয়ে গিয়েছিলেন আফগান পাইলটেরা। সেই সব বিমান কী ভাবে আফগানিস্তানে ফেরত আনা হবে, তা স্পষ্ট জানা যায়নি। উজ়বেকিস্তানে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জন হার্বস্ট অবশ্য জানাচ্ছেন, তাঁরা কোনও ভাবেই চান না বিমানগুলি তালিবানের হাতে পড়ুক।
আফগানিস্তানে সরকার বদলের পরে আজই প্রথম বাণিজ্যিক উড়ান চালু হয়েছে কাবুল থেকে। পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের একটি উড়ান ইসলামাবাদ থেকে আজ সকালে কাবুলের হামিদ কারজ়াই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সেই উড়ানে যাত্রীর থেকে কর্মীর সংখ্যা বেশি ছিল। সেই উড়ানটিই অবশ্য কাবুল থেকে ৭০ জন যাত্রী নিয়ে ফের ইসলামাবাদ ফিরে গিয়েছে। যাত্রীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন আফগান নাগরিক, যাঁরা ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনের কর্মীদের আত্মীয়। বছর বাইশের এমনই এক যাত্রী জানিয়েছেন, যত দিন না আফগানিস্তানে ফের মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তিনি আর এ দেশে আসবেন না।
কাবুল বিমানবন্দরের মহিলা কর্মীরাও আতঙ্কে রয়েছেন। মালপত্র স্ক্যানিংয়ের কাজ করেন, এমন দুই মহিলা কর্মী জানালেন, যে কোনও দিন তাঁদের কাজ ছাড়তে হতে পারে। তালিবান তাঁদের মেরে ফেলতে পারে বলেও ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। তবে এত দিন পরে কাবুল বিমানবন্দরে ফের বিমান ওঠা-নামা শুরু হওয়ায় খুশি সেখানকার কর্মীরা। পাকিস্তান এয়ারলাইন্স সূত্রেও জানানো হয়েছে, উড়ানের মাধ্যমে ফের দু’দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় তাঁরা আশাবাদী যে খুব দ্রুত পরিস্থিতি ফের স্বাভাবিক হবে।