travel

কাঁটাতার পেরিয়ে দু’চাকায় ভারত দর্শনে বঙ্গসন্তান

গত ৫ এপ্রিল বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন। পরের দিন কলকাতায় এসে পৌঁছন। এর পরে জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেসে চেপে জম্মু, সেখান থেকে শ্রীনগর পৌঁছেছেন। সেখান থেকেই বাবরের সফর শুরু হচ্ছে।

Advertisement

স্বর্ণাভ দেব

চট্টগ্রাম শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:২৩
Share:

সাইকেল সফর শুরুর আগে শ্রীনগরে বাবর আলি। নিজস্ব চিত্র।

এ যেন সাইকেলে বাঙালির ভারত দর্শন! সেই উদ্দেশ্যে ও-পার বাংলার চট্টগ্রাম থেকে এ দেশে ছুটে এসেছেন বছর বত্রিশের বাবর আলি। কাশ্মীর থেকে পাড়ি দিচ্ছেন কন্যাকুমারিকা। আজ, বুধবার, সফর শুরু বাবরের।

Advertisement

গত ৫ এপ্রিল বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন। পরের দিন কলকাতায় এসে পৌঁছন। এর পরে জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেসে চেপে জম্মু, সেখান থেকে শ্রীনগর পৌঁছেছেন। সেখান থেকেই বাবরের সফর শুরু হচ্ছে। শ্রীনগর থেকে বানিহাল, উধমপুর, জম্মু, পঠানকোট হয়ে দিল্লি ও আগরা। তার পরে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র, ঝাঁসী পেরিয়ে প্রবেশ তেলঙ্গানায়। এর পরে অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক হয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে সফর শেষ হবে। বাবরের হিসাবে সব মিলিয়ে ৪৫ দিনে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার সফর করবেন তিনি।

ভারতে এর আগেও একাধিক বার এসেছেন পেশায় চিকিৎসক এই যুবক। প্রতি বারেই পর্বতারোহণের নেশায় ছুটে এসেছেন। তবে এ বারের সাইকেল সফর সে দিক থেকে ব্যতিক্রমী। সীমান্ত পেরিয়ে এ-পারের মানুষের আতিথেয়তায় আপ্লুত বাবর। মিলেছে সংবর্ধনাও। নিছক প্রতিবেশী দেশে ঘুরে বেড়ানো নয়, এ দেশের নানা অঞ্চলে যে স্বাতন্ত্র্য রয়েছে, তার স্বাদ গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গার মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতাও অন্যতম উদ্দেশ্য বাবরের। তাঁর কথায়, “যা আছে জগতে তা-ই আছে ভারতে। আসলে গাড়িতে চেপে তো প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছনো সম্ভব হয় না। সাইকেলে সেই সুযোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি সাইকেল সফরে খরচও বেশ কম। স্বাধীন ভাবে নিজের ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ানো যায়। প্রকৃতিকে চাক্ষুষ করার পাশাপাশি নানা অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে মেলামেশার আকর্ষণও রয়েছে।”

Advertisement

নববর্ষের প্রাক্কালে এই সফর শুরুর কারণ হিসাবে বাবর জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে কোথাও চাকরি করছেন না। কিছু দিন পরেই ফের কোনও সংস্থায় যোগ দেবেন। তাই সময়ের সদ্ব্যবহারের জন্যই এই সময়টা বেছে নিয়েছেন চট্টগ্রামের যুবক।

দহনে যখন পুড়ছে গোটা দেশ সেই সময়ে এমন সফরে কী ভাবে গরমের মোকাবিলা করবেন? বাবর বলেন, “আমি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠি। ভেবে রেখেছি, প্রতিদিন সাড়ে ৫টার মধ্যে যাত্রা শুরু করব। সকালের দিকে যতটা সম্ভব এগিয়ে যাব। তার পরে দুপুরের দিকে বিশ্রাম। আবার রোদের তেজ কিছুটা কমলে ফের যাত্রা শুরু।” আর শারীরিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে নিজের উপরেই আস্থা রাখছেন পেশায় চিকিৎসক বাবর।

প্রতিদিন ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পথ চলার লক্ষ্য বাবরের। সাইকেলে দৈনিক শতাধিক কিলোমিটার পাড়ি দেওয়া তাঁর পক্ষে অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগে দেশে একাধিক বার সাইকেলে ‘লং টুর’ করেছেন বাবর। একটানা ৯ দিনে ১০৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা সম্বল করেই এ বারের ‘কঠিন’ সফর শুরু করছেন।

সাইকেলে চেপে দূরদূরান্তে ঘুরে বেড়ানোর শুরুটা হয়েছিল ‘অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব অব চট্টগ্রাম’ নামে একটি ক্লাবে। বাংলাদেশে ছুটির দিন শুক্রবার। প্রতি সপ্তাহে ওই দিনটায় সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। প্রথম দিকে নিজের জেলা পেরিয়ে পাশের জেলায়। আস্তে আস্তে সেই ক্ষেত্র প্রসারিত হল। বাবর বলেন, “আমাদের দেশে ৬৪টা জেলা। ২০১৯ সালে ৬৪ জেলায় হেঁটেছিলাম। পরে সাইকেলে দক্ষিণের টেকনাফ থেকে উত্তরের তেঁতুলিয়া পর্যন্ত গিয়েছি। আখাউড়া থেকে মুজিবনগর পর্যন্তও রাইড করেছি। বাংলাদেশের সুন্দরবন সংলগ্ন অংশেও সাইকেল চালিয়েছি। সে-ও দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা।”

শুধু সাইকেল নয় পর্বতারোহণ, হাইকিংয়ের মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসেরও নেশা রয়েছে বাবরের। তিনি জানান, এগুলোই তাঁর বেঁচে থাকার রসদ। তার অর্থ জোগানের উদ্দেশ্যেই চাকরি। তবে উপমহাদেশে এ ধরনের স্পোর্টস সম্পর্কে মানুষের ধারণা কম। তার জেরে একাধিক বার চাকরি ছাড়তে হয়েছে। তা নিয়ে অবশ্য আক্ষেপ নেই বাবরের। ভবিষ্যতে পূর্ব ইউরোপে সাইকেল সফরে যেতে চান। আপাতত ভারত ভ্রমণ নিয়েই উত্তেজিত বত্রিশের এই বঙ্গসন্তান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement