এই পাখির ছবি পোস্ট করে জটায়ু বলে দাবি করা হয়। ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া।
রামায়ণেরর জটায়ুর দেখা মিলল কেরলের পাহাড়ে, একটি বিশাল পাখির ছবি দিয়ে এমনই দাবি করেছেন এক নেটাগরিক। সেখানে দেখা যাচ্ছে, খাঁচা থেকে ছাড়া পেয়ে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে উড়ে যাচ্ছে পাখিটি। সেই পাহাড়ের মাথায় আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা গোটা ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করেন। পরে সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে।
টুইটারে মঙ্গলবার ভিডিয়োটি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘খুব কমই দেখা পাওয়া যায় রামায়ণের পবিত্র পাখি জটায়ুর। সম্প্রতি তাকে দেখা গেল কেরলের সদয়মঙ্গল জঙ্গলে, যেখানে জটায়ু পার্ক রয়েছে। দেখুন সেই রাজকীয় পাখি ও তার সুন্দর প্রসারিত ডানা’। পোস্টে বেশ কিছু ভেরিফায়েড টুইটার হ্যান্ডলকেও ট্যাগ করেছেন কোশলেন্দ্র দাস নামে এই ইউজার।
আসল ঘটনা হল, এটি ২০১৪ সালের একটি ভিডিয়ো, যা ইউটিউবে পাওয়া যায়। এই দৃশ্য রেকর্ড করা হয়েছিল আর্জেন্টিনার ক্যাটামারকা পাহাড়ের উপরে। তার প্রায় দেড় বছর আগে পাখিটিকে মৃতপ্রায় অবস্থায় উদ্ধার হয়। চিকিত্সা করা হয় একটি চিড়িয়াখানায়। সুস্থ হলে পাখিটিকে মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: পৌনে ছ’ লাখ কেজির বিমানকে রানওয়ে থেকে সরিয়ে দিচ্ছে সাইক্লোন ডেনিস
এটি রামায়ণের পৌরাণিক পাখি জটায়ু নয়। পাখিটি ‘অ্যান্ডিয়ান কনডোর’। কনডোর হল শকুন বিশেষ পাখি। আর দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিমে অবস্থিত পর্বতের নাম অ্যান্ডিজ। এই পর্বত উত্তরে ভেনেজুয়েলা থেকে কলম্বিয়া, ইক্যুয়াডোর, পেরু, বলিভিয়া, আর্জেন্টিনা হয়ে দক্ষিণে চিলি পর্যন্ত বিস্তৃত। মোট ৩৩ লাখ ৭১ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে এই পর্বত। এই এলাকাই 'অ্যান্ডিয়ান' নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন: টিকটক করতে গিয়ে ট্রেন থেকে রেল লাইনে কিশোর, সমালোচনা রেলমন্ত্রীর
যে পাখিটিকে মুক্ত করার ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়েছে, তাকে ২০১২ সালে ডিসেম্বরে উদ্ধার করা হয় আর্জেন্টিনার ক্যাটামারকা এলাকা থেকে। পাখিটি বিষক্রিয়ার ফলে প্রায় মরতে বসেছিল। কোনও মৃত পশুর দেহ খেয়ে এই হাল হয়ছিল পাখিটির।
স্থানীয়দের সাহায্যে পুলিশ পাখিটিকে উদ্ধার করে বুয়েন্স অ্যারিস চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রায় ১৬ মাস তার চিকিত্সা চলে। চিকিত্সকরা যখন মনে করেন, পাখিটি নতুন করে আকাশে উড়ে যাওয়ার মতো শক্তি সঞ্চয় করে ফেলেছে, তখন তাকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। চিড়িয়াখানায় পাখিটির নাম দেওয়া হয় ‘সায়নি’।
আরও পড়ুন: বিলুপ্তির পথে এই প্রাণীটির দেখা মিলল ৩০ বছর পর
২০১৪ সালের ২৮ মার্চ সায়নিকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। আর্জেন্টিনার পাহাড়ের উপর থেকে তাকে মুক্ত করার সময় তার উদ্ধারকর্তা, চিকিত্সক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যরা বিদায় জানাতে আসেন। সায়নিও উড়ে যাওয়ার আগে যেন ঘুরে দাঁড়িয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে যায়। সেই ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করে ইউটিউবে আপলোড করা হয়।
দেখুন সেই ভিডিয়ো:
পুরনো সেই ভিডিয়োকে জটায়ুর নাম করে চালানোর চেষ্টা করেছেন, কোশলেন্দ্র দাস নামের এই ইউজার। আসল ঘটনা জানার পর অনেকেই তাঁর এই পোস্টের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছেন টুইটারে।
দেখুন সেই পোস্ট: