অভিযোগ, কানাডীয় নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য আবেদন করলে এজেন্টের প্রতারণা ধরে ফেলে কানাডা বর্ডার সিকিউরিটি এজেন্সি। ছবি: সংগৃহীত।
কানাডার কলেজে পড়়াশোনার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা নিলেও ভুয়ো ‘অফার লেটার’ দিয়েছেন এক এজেন্ট। বছর চারেক পর তা ধরা পড়ায় দেশে ফেরানো হতে পারে সাতশোর বেশি ভারতীয় কর্মীকে। যদিও যাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে, সেই এজেন্ট বেপাত্তা।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩-৪ বছর আগে সাতশোর বেশি পড়ুয়ার কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করেছিলেন ব্রিজেশ মিশ্র নামে এক এজেন্ট। কানাডার কলেজে পড়াশোনার জন্য ওই পড়ুয়াদের অফার লেটার দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বিনিময়ে কলেজের ফি এবং অন্যান্য খরচ বাবদ প্রত্যেকের থেকে বিপুল অর্থ নিয়েছিলেন। কানাডার কলেজে পড়াশোনার পর ডিগ্রিও পেয়ে গিয়েছেন ওই ভারতীয়রা। এমনকি, সেই ডিগ্রির সাহায্যে সে দেশে চাকরিও করছেন। তবে এত বছর পর কানাডীয় নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য আবেদন করলে এজেন্টের প্রতারণা ধরে ফেলে কানাডার বর্ডার সিকিউরিটি এজেন্সি।
কী ভাবে এই প্রতারণাচক্র কাজ করে? ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পঞ্জাবের জলন্ধরে এডুকেশন মাইগ্রেশন সার্ভিসেস নামে একটি সংস্থার প্রধান ব্রিজেশ। অভিযোগ, কানাডায় কলেজে ভর্তির জন্য নথিপত্র জমা দেওয়া এবং ওই কলেজগুলি থেকে অফার লেটারের নামে প্রত্যেক পড়ুয়ার থেকেই বিপুল অর্থ নিয়েছেন তিনি।
দ্বাদশের পর বেশির ভাগ পড়ুয়া বিদেশে যাওয়ার জন্য স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করেন। সে সময় কোনও এজেন্ট বা পরামর্শদাতা সংস্থার দ্বারস্থ হন তাঁরা। সাধারণত, ওই পড়ুয়ারা শিক্ষাগত যোগ্যতার নথিপত্র, ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ় টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস) পরীক্ষার শংসাপত্র এবং বিদেশে পড়াশোনা চালানোর জন্য আর্থিক ক্ষমতা সম্পর্কিত প্রমাণ জমা দেন এজেন্টের কাছে। এ ধরনের নথিপত্রের ভিত্তিতে প্রত্যেক পড়ুয়ার হয়ে বিদেশি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ শুরু করেন তাঁর এজেন্ট। পড়ুয়ারা কোন ধরনের কোর্সে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগ্রহী, তা-ও প্রাধান্য দেন এজেন্টরা। তার ভিত্তিতেই পড়ুয়াদের হয়ে বিদেশি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন তাঁরা। কোনও বিদেশি কলেজ থেকে ‘অফার লেটার’ পেলে তার বদলে ওই কলেজে পড়াশোনার ফি জমা করাতে হয় পড়ুয়াকে। সেই সময় এজেন্টের মারফত তা জমা দেন পড়ুয়া। কলেজ থেকে অনুমোদন জানিয়ে পড়ুয়াকে চিঠি দেওয়া হলে জমা দেওয়া টাকার রশিদ পান ছাত্রছাত্রীরা। এ ছাড়া, প্রথম বছরে বিদেশে থাকার খরচাপাতি চালানোর অর্থ যে পড়ুয়ার রয়েছে, তার প্রমাণ সে সময় দিতে হয়। এ সবই করা হয় এজেন্ট মারফত। বিদেশি কলেজে পড়ার সুযোগ পেলে অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করা হয়। এর পর বায়োমেট্রিক টেস্টের পর পড়ুয়ার ভিসার আবেদন গ্রাহ্য বা খারিজ করে কানাডার দূতাবাস।
পড়ুয়াদের নানা নথিপত্র খতিয়ে দেখলেও অফার লেটারটিতে বিশেষ দৃষ্টিপাত করা হয়নি বলে মনে করছেন এক পরামর্শদাতা সংস্থা। তাদের দাবি, ‘‘ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হলেও আশ্চর্যের বিষয় যে একটি বিশেষ কলেজের থেকে এতগুলি অফার লেটার পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খতিয়ে দেখল না কানাডীয় দূতাবাস।’’