হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় দোষী নব্য জেএমবি জঙ্গি। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলায় নব্য জেএমবির সাত সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দিল ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। তিন বছর আগে গুলশনের ওই কাফেতে জঙ্গি হামলায় ২২ জনের মৃত্যু হয়।
অপরাধের সঙ্গে যোগসাজশ প্রমাণিত না হওয়ায় মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে বেকসুর খালাস খালাস করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইবুনালের বিচারক মজিবুর রহমান।যাদের ফাঁসির সাজা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গাঁধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। রায় শুনে এই জঙ্গিরা ছিল নির্বিকার। তাদের একজন আদালতেই চিৎকার করে ওঠে, “আমরা কোনো অন্যায় করিনি।”
বুধবার আদালতে উপস্থিত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথায় ছিলো আইএস এর চিহ্ন সম্বলিত টুপি। পুলিশের হেফাজতে থাকা এই আসামীর কাছে টুপিটি পৌঁছানো নিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যমে আলোচনা চলছে। আইএস-এর টুপি পরে রিগ্যানের আদালতে আসা বিষয়ে সরকারি আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আমি বিস্মিত। এই দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। তাঁরা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। এ নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।আবদুল্লার জানান, রায় ঘোষণার সময় আসামীরা খুবই উদ্ধত আচরণ করেছে।
আরও পড়ুন: খাগড়াগড় চক্রী হাতকাটা নাসিরুল্লার মৃত্যুদণ্ড, হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হানায় সাজা বাংলাদেশে
২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশনের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। রাত ৯টার নাগাদ সশস্ত্র পাঁচ জঙ্গি বেকারিতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি করে ২২ জনকে হত্যা করে। এর মধ্যে ন’জন ইতালিয়, সাত জন জাপানি, এক জন ভারতীয় নাগরিক। এই সময়ে অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। জঙ্গিরা বেকারিতে যাওয়া অতিথিদের রাতভর পণবন্দি করে রাখে।পরদিন সকালে সেনাবাহিনী কমান্ডো তাদের অভিযান– অপারেশন থান্ডারবোল্ট এর মাধ্যমে পরিস্থিতির ইতি টানে। সেই অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও একজন বেকারি শেফ নিহত হন। এ ছাড়া পরে মারা যান চিকিৎসাধীন আরও একজন বেকারিকর্মী।
আরও পড়ুন: রাশিয়া থেকে সুদান, সরব বিশ্বের নারীরা
দেশবিদেশের আলোচনায় উঠে আসা এই জঙ্গি হামলার ঘটনায় পুলিশের এসআই রিপন কুমার দাস গুলশন থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ সংক্রান্ত কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে। প্রায় দুই বছরের তদন্ত শেষে ২০১৮ এর ২৩ জুলাই আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ জমা দেয়া হয়। সেখানে জঙ্গি হামলায় ২১ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছিল তদন্ত সংস্থা। তবে ওই হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ জন ঘটনাস্থলে ও দেশ জুড়ে চলা সেই সময়ের জঙ্গিদমন অভিযানে আরও আট জন নিহত হয়েছিল। সেই কারণেই অভিযুক্ত ২১ জনের মধ্যে নিহত ১৩ জঙ্গিকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।