ইমরান খান। ফাইল চিত্র।
ছবিটা পরিষ্কার হচ্ছিল গত শুক্রবার থেকে। লাহৌরের কাছে গুজরানওয়ালায় লক্ষাধিক মানুষ ভিড় করেছিলেন গদিচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফের ভার্চুয়াল বক্তৃতা শুনবেন বলে। যেখানে ইমরান খানের সরকার আর পাকিস্তান সেনা বাহিনীর প্রধান কমর বাজওয়াকে তুলোধোনা করেছিলেন লন্ডনে চিকিৎসাধীন, আপাতত জামিনে মুক্ত শরিফ। গত কাল ঠিক একই রকম ভিড় দেখল করাচির জিন্না স্টে়ডিয়াম। শরিফ-কন্যা মরিয়ম নওয়াজ় এবং আর এক প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী বেনজ়ির ভুট্টোর পুত্র বিলাবল যে সভার নেতৃত্ব দিলেন। তাঁদের বক্তৃতার ছত্রে ছত্রে বর্তমান সরকার ও তার প্রধানমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ শুনে হাততালিতে ফেটে পড়া স্টেডিয়ামের মেজাজ ইমরানের কপালে ভাঁজ ফেলবে বলেই মনে করেছেন কূটনীতিকেরা।
মেয়াদ ফুরনোর প্রায় আড়াই বছর আগেই প্রবল চাপে ইমরান খান ও তাঁর সরকার। বস্তুত ইমরানকে সরাতে রীতি মতো কোমর বেঁধেছে পাকিস্তানের ১১টি রাজনৈতিক দল। নওয়াজ়ের দল পিএমএল (এন) এবং বিলাবলের দল পিপিপি তো আছেই, তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ছোট-বড়-আঞ্চলিক মিলিয়ে আরও ৯টি দল। এঁরা সকলে জোট বেঁধে গড়েছেন পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)। গত মাসেই জোটটি তৈরি হয়েছিল। এক-একটি শহরে কর্মসূচি করে তারা ইমরান সরকারকে আক্রমণ করে চলেছে। কালকের সভা তারই অন্যতম। জানুয়ারিতে ইসলামাবাদে বড় জমায়েতের পরিকল্পনা রয়েছে।
গত কাল করাচির সভা থেকে একের পর এক আক্রমণ শানান নওয়াজ়-কন্যা মরিয়ম। বাবা শরিফের সুরেই ইমরানকে নিশানা করে বলেন, ‘‘উনি (ইমরান) কাল বলেছেন একটা সভা দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আসলে উনি শুক্রবারের ভিড় দেখে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছেন। দিনের পর দিন উনি দেশবাসীর প্রতি অন্যায় অবিচার করে সেনার পিছনে মুখ লুকোচ্ছেন। এত সাহস ওঁর হয় কী করে যে, উনি দেশের সেনাবাহিনীকে নিজের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন?’’ এর পরেই অবশ্য মরিয়ম জানান, তাঁরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নন। বাহিনীর মাথায় বসে যে সব আধিকারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সরব তাঁরা। মরিয়ম যে নাম না করে সেনাপ্রধান বাজওয়াকে নিশানা করেছেন, তা স্পষ্ট। কালকের বক্তৃতার কয়েক ঘণ্টা পরেই মরিয়মের স্বামীকে গ্রেফতার করে করাচির পুলিশ। টুইটারে মরিয়ম লেখেন, হোটেলের ঘর ভেঙে ঢুকে পুলিশ তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করে। মরিয়ম প্রতিহিংসার অভিযোগও তোলেন। পরে জামিনে ছাড়া হয় তাঁর স্বামীকে।