ফাইল চিত্র।
ঢাকার যে ভাষা শহিদ মিনারে ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে তাঁর লেখা গান বাজিয়ে ভাষা শহিদদের স্মরণ করেন বাংলাদেশের মানুষ, সেই বেদিতে শনিবার শেষ শ্রদ্ধা জানানো হল আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীকে। তখনও স্পিকারে নিরন্তর বেজে চলেছিল তাঁর রচিত সেই একুশের গান— ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...’।
গত ১৯ মে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক ও সম্পাদক গাফ্ফার চৌধুরী, এক কথায় যাঁকে বলা যায় ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার বাতিঘর। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে তাঁর স্থান একুশের গানের গীতিকার হিসাবে। দেশের প্রতিটি সঙ্কটে ঢাকার বিভিন্ন সংবাদপত্রে লেখা তাঁর কলমের জন্য অপেক্ষা করতেন বাংলাদেশের মানুষ। দীর্ঘদিন কলম লিখেছেন আনন্দবাজার পত্রিকাতেও। ছিলেন ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধাও। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মুখপত্রের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন একটা সময়ে।
শনিবার দুপুরে লন্ডন থেকে বিশেষ বিমানে গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ এসে পৌঁছয় ঢাকায়। বিমান থেকে তাঁর দেহ নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত কফিনটি বাইরে আসার পরে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাঁর স্মরণে ‘গার্ড অব অনার’ দেয় বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বাহিনী। এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়। তার পরে একটি শকটে কফিনটি আনা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে ভাষা শহিদ মিনারে। সেখানে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মোহম্মদ আব্দুল হামিদ এবং তার পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফে পুষ্পস্তবক দেওয়া হয়। এর পরে শ্রদ্ধা জানান সংসদের স্পিকার শিরিন শরমিন চৌধুরী। তার পরেছিলেন বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। শাসক আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কফিনে ফুল দিয়ে বলেন, “আমাদের সাংস্কৃতি জগতের সাম্প্রতিক কালের সব চেয়ে বড় বটবৃক্ষটির পতন ঘটল। তাঁর রচিত ‘একুশের গান’-এ তিনি আমাদের মধ্যে চিরটা কাল বেঁচে থাকবেন।” নেতাদের পরে হাজার হাজার গুণমুগ্ধ সাধারণ মানুষ সারিবদ্ধ ভাবে এসে তাঁর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এর পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে ধর্মীয় আচার পালনের পরে মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর স্ত্রীর পাশে সমাহিত করা হয় গাফ্ফার চৌধুরীকে।