এসএসসি

হস্তক্ষেপ চেয়ে অনশন-মঞ্চ থেকে চিঠি মমতাকে

উপাচার্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে পেয়েছিলেন। এ বার নিজেদের সমস্যার সমাধানে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করলেন স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর পরীক্ষা পাশ করেও কাজ না-পাওয়া, অনশনরত প্রার্থীরা। কিন্তু রাজ্য সরকার যে নিজেদের অবস্থানে অনড়, এ দিনই তা বুঝিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪১
Share:

উপাচার্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে পেয়েছিলেন। এ বার নিজেদের সমস্যার সমাধানে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করলেন স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর পরীক্ষা পাশ করেও কাজ না-পাওয়া, অনশনরত প্রার্থীরা।

Advertisement

কিন্তু রাজ্য সরকার যে নিজেদের অবস্থানে অনড়, এ দিনই তা বুঝিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ফের জানান, চাকরি পাবেন শুধু যোগ্য প্রার্থীরাই। ‘হোক কলরব’-এর যে-সব ছাত্রছাত্রী আন্দোলনকারী কর্মপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদেরও একহাত নিয়েছেন মন্ত্রী।

এসএসসি-র দফতরে অনশন আন্দোলনে বসা শিক্ষকপদ প্রার্থীরা সোমবার চিঠি পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন। তাঁদের প্রতিনিধিরা বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারের কাছে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা চিঠিটি দেন। তাতে সমস্যার সুরাহায় মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করার সঙ্গে সঙ্গে আলোচনার জন্য সময় চেয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

আর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পার্থবাবু এ দিন বলেন, “যাঁরা আন্দোলনকারীদের সমর্থন করছেন, তাঁরাই বলে দিন, কী ভাবে চাকরি দেওয়া যেতে পারে। আমি তো বারবার বলছি, অনশন প্রত্যাহার করতে হবে।” ‘হোক কলরব’-এর অন্যতম মুখ এবং এসএসসি আন্দোলনকারীদের সহমর্মী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অরুমিতা মিত্র বলেন, “রাজ্য সরকার তো আমাদের আন্দোলনের সময়েও বহিরাগত তত্ত্ব খাড়া করতে চেয়েছিল। কিন্তু তা ধোপে টেকেনি। এঁদের দাবি ন্যায্য। চাকরি না-পেলে আন্দোলন চলবে।”

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ২০১২ সালের এসএসসি পরীক্ষার চূড়ান্ত মেধা-তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও চাকরির সুযোগ থেকে তাঁরা বঞ্চিত। অথচ মেধা-তালিকায় তাঁদের পিছনে থাকা অনেকে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। নিয়োগের দাবি তুলে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন এক দল প্রার্থী। ২৭ জানুয়ারি তাঁদেরই কিছু সঙ্গী ১৪৪ ধারা ভেঙে সোজা ঢুকে পড়েন সল্টলেকে এসএসসি অফিসে। অনশন-অবস্থানে বসেন কমিশনের চেয়ারম্যানের দফতরের সামনে।

পুলিশ-প্রশাসনের তরফে অনশনকারীদের সরিয়ে দেওয়ার কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। তাঁদের সমস্যা মেটাতেও সক্রিয় ভাবে এগিয়ে আসেনি প্রশাসন। কয়েক জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান অনশনরত প্রার্থীরা। ‘বঞ্চনা’র প্রতিবাদে ও নিয়োগপত্রের দাবিতে অন্য এক দল প্রার্থী কমিশনের বাইরে অবস্থান করছেন। কমিশন ও সরকার অবশ্য বারে বারেই জানাচ্ছে, কমিশনের নিয়মবিধি মেনে ওই প্রার্থীদের কাজ দেওয়া সম্ভব নয়। এ দিনও সে-কথা বলেন পার্থবাবু।

মেধার ভিত্তিতে তৈরি যে-তালিকার কিছু প্রার্থী নিয়োগপত্র পেয়েছেন, সেই তালিকারই উপরের দিকে থাকা পড়ুয়ারা কেন চাকরি পাবেন না, আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন এটাই। আদালতের রায়ের জেরেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত বলে জানান কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের। কমিশনের দাবি, এসএসসি-র নিয়ম মেনেই চাকরি দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীরা তা মানতে রাজি নন। চাকরির সুযোগ না-মিললে অনশন-আন্দোলন চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

এর আগে ওই প্রার্থীরা তাঁদের বিভিন্ন অবস্থান-মঞ্চে কিছু রাজনৈতিক নেতানেত্রীকে পাশে পেয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। এর মধ্যে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী রবিবার জানান, আন্দোলনকারীদের আবেদন এলে তিনি তাঁদের দাবির বিষয়ে প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। সে-দিনই অনশনকারীদের প্রতিনিধিরা রাজভবনে যান। কিন্তু ত্রিপাঠী তখন রাজভবনে ছিলেন না। তার পরেই এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠান আন্দোলনকারীরা।

যাদবপুর-প্রেসিডেন্সির বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী ইতিমধ্যেই অনশনকারীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছেন। এ দিন আন্দোলনকারীদের কাছে গিয়ে তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা জানান ডিওয়াইএফের এক দল প্রতিনিধি। আন্দোলনে রাজনীতির রং লাগলে অবশ্য তাঁদের আপত্তি আছে বলে জানিয়ে দেন প্রার্থীরা। পরে যাদবপুরের ‘হোক কলরব’ আন্দোলনের এক দল প্রতিনিধির সঙ্গে বইমেলায় মিছিলও করেন অনেক শিক্ষকপদ প্রার্থী। হোক কলরব-এর ধাঁচে এই আন্দোলনের নাম হয়েছে ‘হোক আলোড়ন’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement