হামলার প্রতিরোধ করেই ভোটে মিলবে ভাল ফল, আশা বুদ্ধের

পঞ্চায়েত বা পুরভোটের পুনরাবৃত্তি এ বার আর হবে না। লোকসভা ভোটেও শাসক দল ফের হাঙ্গামার চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেও এ বার সেই হামলা প্রতিরাধের ডাক দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সম্ভাব্য ওই আক্রমণ মোকাবিলা করেই এ বার বামেদের ফল আগের চেয়ে ভাল হবে বলেও তাঁর দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:২৫
Share:

পঞ্চায়েত বা পুরভোটের পুনরাবৃত্তি এ বার আর হবে না। লোকসভা ভোটেও শাসক দল ফের হাঙ্গামার চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেও এ বার সেই হামলা প্রতিরাধের ডাক দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সম্ভাব্য ওই আক্রমণ মোকাবিলা করেই এ বার বামেদের ফল আগের চেয়ে ভাল হবে বলেও তাঁর দাবি।

Advertisement

গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বিপযর্য়ের পরে সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত এবং কিছু পুরসভার নির্বাচনেও বামেদের রক্তক্ষরণ অব্যাহত ছিল। কিন্তু তৃণমূলের

সন্ত্রাস এবং ভোট লুঠের দিকে অভিযোগ করে সিপিএম নেতারা বারবারই দাবি করছেন, পঞ্চায়েত ভোটের ওই ফল সর্বত্র জনমতের সঠিক প্রতিফলন নয়। একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু সেই কথাই বলেছেন। তবে একই সঙ্গে জানিয়েছেন, এ বার আর হামলা করে সফল হবে না শাসক শিবির। বুদ্ধবাবুর কথায়, “সমাজবিরোধীদের সমর্থন করার প্রবণতার প্রভাব ভোটে পড়বেই। আর এটা ওরা (তৃণমূল) যত বুঝতে পারবে, ততই হাঙ্গামা করে ভোট বাতিল বা ভোটারদের ভয় দেখিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে রাখার চেষ্টা করবে!

Advertisement

এই হামলাকে এ বার প্রতিরোধ করতেই হবে আমাদের!”

পুরভোট বা পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলের এই ‘হামলা’র যথাযথ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করেন বুদ্ধবাবু। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আরও আশা, লোকসভা ভোটের গুরুত্ব বুঝেই মানুষ ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে ভোট দিতে যাবেন।

রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অপরাধীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ বারেবারেই করেন বুদ্ধবাবুরা। ভোটের মুখে সেই সুরই চড়া করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, “সরকারের মত সাধারণ ভাবে অপরাধীদের পক্ষে! সমাজবিরোধীদের জন্য পাকাপোক্ত সরকার!” তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের নাম না-করেই তাঁর অভিযোগ, জেলা স্তরের নেতারা যদি সরাসরি পুলিশ এবং বিরোধীদের উপরে হামলার হুমকি দেন এবং স্বয়ং

মুখ্যমন্ত্রী ‘দক্ষ সংগঠক’ বলে তাঁর পাশে দাঁড়ান, তা হলে পুলিশ-প্রশাসন কী কাজ করবে? বাম জমানায় অপরাধের ঘটনা ঘটলে সরকার যথাসাধ্য ব্যবস্থা নিয়েছে, প্রয়োজন বিশেষে দলীয় স্তরেও পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে বুদ্ধবাবু বোঝাতে চেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “সমাজবিরোধীর কাজ করে পার্টির মাথায় থাকা যাবে না, এটাই পার্টির নিয়ম। এই কথাটা আমরা বোঝাতে পেরেছিলাম। এখনও তা-ই বলছি।”

নৈরাজ্য এবং অপরাধ-প্রবণতা নিয়ে রাজ্য সরকারের আক্রমণের পাশাপাশিই বুদ্ধবাবু এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি-প্রশ্নে তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেই চলবেন। দিল্লির শাহি ইমাম এ দিনই

এ রাজ্যে তৃণমূলকে সমর্থন করার

কথা বলেছেন। তৃণমূল নেত্রী

এনডিএ-কে সমর্থন করবেন না বলেই তাঁরা এই অবস্থান নিচ্ছেন, তা-ও বলেছেন ইমাম। তৃণমূল নেত্রীও বিজেপি-র বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন। তা হলে বুদ্ধবাবুরা কেন বিজেপি নিয়ে মমতাকে বিঁধছেন? প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “এটা তাঁর (ইমাম) শর্ত। মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলুন যে,

উনি কোনও অবস্থাতেই বিজেপি-কে সমর্থন করবেন না! সেটা এখনও বলছেন না।”

এ রাজ্যের মানুষ কোনও ভাবেই বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন করবেন না বলে বুদ্ধবাবুর আশা। তাঁর বিশ্লেষণ, কংগ্রেস বা বিজেপি কারও পক্ষেই একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সম্ভব নয়। তবে তৃণমূল নেত্রী যে ভাবে ‘ক্ষমতালোলুপ’ (পাওয়ার ব্রোকার), তাতে ভোট পরবর্তী কালে বিজেপি বা কংগ্রেস, যার দিকে গেলে সুবিধা হবে, তাদের সঙ্গে হাত মেলাতে তিনি দ্বিধা করবেন না বলে মন্তব্য করেছেন বুদ্ধবাবু। তাঁর কথায়, “উনি হাতে ক্ষমতা চান। এখন মুখে কংগ্রেস বা বিজেপি বিরোধিতা করলেও পরে হাত মেলাতেই পারেন!”

যার জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাল্টা আক্রমণ করেছেন, “বুদ্ধবাবুর জানা উচিত, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের পরে রাজ্যের মানুষ ওঁদের সরে যেতে বলেছিল। কিন্তু তিনি ক্ষমতালোভী বলে শেষ দিন পর্যন্ত থেকে গিয়েছেন। আর তিনি মমতা বেন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতার কথা বলছেন?” মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হচ্ছে বুঝেই তৃণমূল নেত্রী ইউপিএ-২ সরকার থেকে সরে এসেছিল, ক্ষমতালোভী হলে যা সম্ভব ছিল না সেই কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন পার্থবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement