জনসভার পোস্টারে চোখ আটকে যাচ্ছে একেবারে নীচের দিকে। সবুজ কালিতে লেখা ‘বিশেষ ঘোষণা’। অনুরোধ করা হয়েছে, যাঁরা সারদা-সহ অন্য বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে ফেরত পাননি, তাঁরা যেন লগ্নির প্রমাণপত্র নিয়ে আজ, শনিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সভা-মঞ্চে হাজির হন। শহর কংগ্রেসের এই পোস্টার নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে নবদ্বীপে। জনসভার মাঠ ভরাতে এই ‘সারদা-কৌশলের’ আশ্রয় নেওয়া হয়েছে কি না সে প্রশ্ন তৃণমূল যেমন তুলেছে, তুলেছে বিজেপি-ও।
নবদ্বীপ নিশান ক্লাবের মাঠে শনিবার কংগ্রেসের জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা অধীরের। সভা উপলক্ষে নবদ্বীপ ছেয়ে গিয়েছে পোস্টার-ব্যানারে। এলাকায় সভা-সমাবেশ কম হয় না। কিন্তু এ ভাবে পোস্টারে বিশেষ ঘোষণায় লগ্নি করে প্রতারিতদের জনসভায় আসতে আহ্বান? নবদ্বীপ মনে করতে পারছে না।
হঠাৎ এই উদ্যোগ কেন?
কংগ্রেসের স্থানীয় নেতাদের বক্তব্যসারদা-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে প্রতারিতদের তালিকাভুক্তি এবং ক্ষতিপূরণের জন্য রাজ্য সরকার শ্যামল সেন কমিশন তৈরি করেছিল। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামে থাকা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত কমিশনে গিয়ে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করাতে পারেননি বলে তাঁদের কাছে খবর রয়েছে। নদিয়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অসীমকুমার সাহার দাবি, “তাঁদের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ।”
কিন্তু কমিশন যখন কার্যকরী ছিল, তখন এই কর্মসূচি নিল না কেন কংগ্রেস? নদিয়া জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক নির্মল সাহার জবাব, “তখনও যত জনের কথা জেনেছি, তাঁদের কমিশন-মুখী করেছি। কিন্তু কমিশন উঠে যাওয়ার পরেও আরও অনেকের নাম জানা গিয়েছে।” তিনি জানাচ্ছেন, দলের তরফে প্রতারিতদের কাগজপত্র একত্রিত করে বিষয়টি জেলাশাসককে জানানো হবে। সেখানে কাজ না হলে প্রয়োজনে রাজ্যপালকে বিষয়টি জানানো হবে।
জেলা কংগ্রেসের দাবি, তাদের এই ‘বিশেষ ঘোষণা’য় সাড়া মিলতে শুরু করেছে। আগে ওই সভা হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার। সভা এক দিন পিছোলেও পোস্টারে তারিখ বদলানো হয়নি। ফলে, নবদ্বীপ ও লাগোয়া এলাকার কিছু মানুষ শুক্রবারেই কাগজপত্র নিয়ে নিশান ক্লাবের মাঠে হাজির হয়ে যান। তাঁদের আজ, শনিবার সভাস্থলে আসতে বলা হয়েছে কংগ্রেসের তরফে।
যদিও প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, সারদা বা অন্য বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থায় প্রতারিত মানুষদের দলের সভাস্থলে যোগাযোগ করতে বলার ব্যাপারে কোনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত তাঁদের তরফে নেওয়া হয়নি। দলের কর্মসূচির জন্য কয়েকদিন ধরে কৃষ্ণনগরে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন প্রদেশ নেতা তথা বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী। বিষয়টি তাঁরও নজরে আসেনি। মনোজবাবুর কথায়, “হয়তো অত্যুৎসাহী কেউ করেছেন!”
কংগ্রেসেরই একটি অংশের অবশ্য বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত সারদা-কাণ্ডে প্রতারিতদের জন্য আন্দোলনে দল হিসেবে তেমন ভাবে ঝাঁপায়নি কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানই তাঁর মঞ্চের তরফে মূলত আন্দোলন করছেন। প্রদীপ ভট্টাচার্য, নির্বেদ রায়, অরুণাভ ঘোষের মতো নেতারা কখনও-কখনও ওই ধরনের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। ব্যক্তি মান্নানের বদলে সারদা-কাণ্ডের ফায়দা যাতে দল হিসেবে কংগ্রেস পায়, সে জন্যই এখন কোথাও কোথাও সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে।
নবদ্বীপ শহর কংগ্রেসের এই উদ্যোগে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে অন্য দলগুলিও। বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি জীবনকৃষ্ণ সেনের কটাক্ষ, “এখন তো দেখছি মাঠ ভরাতেও সারদা ভরসা। কংগ্রেসের আছে কী, যে ওরা মানুষের পাশে দাঁড়াবে?” আরও চাঁছাছোলা ভাষায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেছেন, “কংগ্রেস এখন সাইনবোর্ড। অধীর চৌধুরীর সভায় লোক হবে না বুঝে ওরা এ ভাবে মাঠ ভরাতে চায়।”
যাঁর সভা ঘিরে এত হইচই, সে-ই অধীর অবশ্য বলছেন, “টাকা ফেরত দেব বলে আমরা তো লোক ঠকাতে পারব না। কংগ্রেসের জন্যই আজ ময়দানে সিবিআই নেমেছে। ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষের জন্য আমাদের এই লড়াই আগেও ছিল, এখনও চলবে।”