মাওবাদীদের আটকাতে মিছিল। বলরামপুরে। ছবি: সুজিত মাহাতো।
সিঁদুরে মেঘ দেখছে তৃণমূল। তাই মাওবাদীদের আটকাতে বান্দোয়ানে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি’ গড়ল শাসকদল। সিপিআই (মাওবাদী)-র ‘শহিদ সপ্তাহ’ পালনের মধ্যেই!
তবে, এই কমিটিতে তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গেই সামিল হয়েছেন সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরাও। সারদা থেকে যাদবপুরশাসকদলের সঙ্গে বিরোধীদের বেড়ে চলা তিক্ততা ও শত্রুতার মধ্যেই অন্তত সন্ত্রাস রুখতে এককাট্টা হয়েছে সব পক্ষ। সম্প্রতি বান্দোয়ানের যশপুর গ্রামে রীতিমতো সভা করে ওই প্রতিরোধ কমিটি গড়া হয়। যশপুরের ওই সভায় তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সিপিএম, ঝাড়খণ্ড, বিজেপি, কংগ্রেসের কর্মীরাও অনেকে ছিলেন। সিপিএমের কর্মীরা জানান, তাঁরাও পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে নয়া কমিটিকে প্রতিরোধের পরামর্শ দেবেন। এসপি নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “প্রতিরোধ কমিটি হওয়ায় জঙ্গলমহলে শান্তিরক্ষায় পুলিশের সুবিধা হবে।”
এক সময়ের মাওবাদী উপদ্রুত বলরামপুরেও প্রতিরোধের ডাক দিয়ে দু’বছর পরে মোটরবাইক মিছিল করে তৃণমূল প্রভাবিত ‘জঙ্গলমহল উন্নয়ন বিরোধী প্রতিরোধ কমিটি।’
রাজ্যে মাওবাদী নাশকতার মানচিত্রে এক সময় বান্দোয়ান উপরের দিকেই ছিল। ’০৫-এর শেষে মাওবাদীরা পুড়িয়ে মারে পুরুলিয়ার প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি সিপিএমের রবীন্দ্রনাথ কর ও তাঁর স্ত্রীকে। বান্দোয়ানের আরও কিছু সিপিএম নেতা-কর্মী খুন হন। ’০৭ সালে ‘মাওবাদী প্রতিরোধ কমিটি’ গড়েন সিপিএম কর্মীরা। মাওবাদী নাশকতা অযোধ্যা পাহাড় ঘিরে ছড়িয়ে পড়ে বলরামপুর, বাঘমুণ্ডিতে। পালাবদলের পরে যৌথবাহিনীর লাগাতার অভিযানে অযোধ্যা স্কোয়াডও ভেঙে যায়। কিছু মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেন। অনেকে গ্রেফতার হন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মাওবাদী নেতা কিষেনজি-র মৃত্যুর পরে রাজ্যে সিপিআই (মাওবাদী)-র সংগঠনের মাজাই ভেঙে যায়।
এক সপ্তাহ আগে বান্দোয়ান থেকে ৭ কিমি দূরে ঝাড়খণ্ডের চেকমার জঙ্গলে মাওবাদীদের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে এক বাঙালি কোবরা জওয়ান নিহত হন। তার পরেই বেলপাহাড়ি, বলরামপুর ও আড়শায় পড়েছে মাওবাদী নামাঙ্কিত ব্যানার ও পোস্টার। এই ঘটনা জঙ্গলমহলের তৃণমূলকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। আর সে জন্যই সিপিএমের পুরনো প্রতিরোধ কমিটির নাম বদলে মাওবাদীদের রুখতে পথে নেমেছে তৃণমূল, এমনটাই মনে করছেন বান্দোয়ানবাসী।
বান্দোয়ান ব্লক তৃণমূল নেতা রঘুনাথ মাঝি বলেন, “সব দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গড়ে নজর রাখতে বলেছি। সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই ফোনে খবর দিতে বলেছি।” সিপিএমের বান্দোয়ান জোনাল সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ হাঁসদা বলেন, “কর্মীরা যদি মাওবাদীদের প্রতিরোধে সামিল হন, তাতে ক্ষতি কী?” আর বান্দোয়ান বাজারের সিপিএম কর্মী মহম্মদ আকিল বলেন, “মাওবাদীদের আক্রমণ ঠেকানোর আমাদের অভিজ্ঞতা সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটির কাজে লাগবে।”