লাটাগুড়িতে সারদার সেই বন্ধ হয়ে যাওয়া রিসর্ট। ছবি: সব্যসাচী ঘোষ
রিসর্টে পর্যটক আসবেন, তাতে আশ্চর্য কিছু নেই। কিন্তু বন্ধ রিসর্টে পর্যটকের ঢল?
হ্যাঁ, তেমনটাই হচ্ছে ডুয়ার্সের লাটাগুড়িতে। সারদার বিশাল রিসর্ট ‘ওয়াইল্ডার রেঞ্জ রিসর্ট’ প্রায় বছরখানেক বন্ধ। কিন্তু তাই দেখতেই আসছেন পর্যটকরা। মস্ত গ্রিলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ছবি তুলছেন। কেউ বা গেটের ফাঁক দিয়ে ঠাহর করার চেষ্টা করছেন, নুড়ি-বিছোনো পথের মাঝে সারদা মায়ের মূর্তি, রিসর্টের দোতলা বাড়ি।
কেন এই আগ্রহ? শনিবারই বন্ধুদের সঙ্গে এক দিনের জন্য ঘুরতে এসেছিলেন রাজেশ সরকার। শিলিগুড়ির একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করেন রাজেশ। বললেন, ‘গোটা দেশ জুড়ে এখন সারদা নিয়েই তো আলোচনা। এখানে এসে শুনলাম, সারদার একটা রিসর্ট রয়েছে। তাই দেখতে এলাম।”
এলাকার বাসিন্দা তথা ব্যবসায়ী হৃদয় রাজবংশী, গোপাল বিশ্বাসদের কথায়, “ওই বন্ধ রিসর্ট দেখতে প্রায়ই পর্যটকেরা আসেন। ছবিও তোলেন।”
লাটাগুড়িতে পর্যটন ব্যবসায় জড়িত ছোট গাড়ির মালিকদের একটি সংগঠনের সভাপতি বাপি চন্দ জানান, পর্যটকদের নানা দর্শনীয় জায়গা ঘোরানোর সময়ে সারদার রিসর্ট দেখানো যেন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “পর্যটকেরা লাটাগুড়িতে পৌঁছে সারদার রিসর্ট কোথায় জানতে চান। এখন আমরা সব পর্যটককেই সেখানে নিয়ে যাই।” সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ায় সারদার রিসর্ট দেখার আগ্রহ আরও বাড়বে, মনে করছেন তিনি। লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যসোসিয়েশন-এর সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেন, “নানা রিসর্টে যে অতিথিরা আসেন, তাঁরা সারদার রিসর্টের খোঁজ করেন। আমাদের বলে দিতে হয়, কী ভাবে যেতে হবে।”
অথচ রিসর্টের গায়ে সারদার নামও লেখা নেই আর। সারদা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর আশঙ্কা করা হয়, আমানতকারীদের একাংশ রিসর্টে হামলা চালাতে পারেন। তখনই রিসর্টের নাম, ‘সারদা গ্রুপ’, কথাগুলি মুছে ফেলা হয়। দেওয়াল, হোর্ডিং কোথাও আর সারদার নাম নেই। গত ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ওই রিসর্ট উদ্বোধন হয়েছিল। মাত্র মাস ছয়েক চলার পরেই রিসর্ট বন্ধ হয়ে যায়। নেওড়া নদীর পাশে, দু’বিঘা জমির ওপর মোট ছ’খানা ঘর রিসর্টে। রিসেপশন, ডাইনিং রুম, জলাশয়, ফোয়ারা, নজরমিনার, সবই মজুত। ম্যানেজার-সহ মোট সাত জন কর্মী ছিলেন। বেতন বন্ধ হওয়ায় অন্য কর্মীরা চলে গেলেও, রয়ে গিয়েছেন রতন রায়। তাঁর আশা, “সিবিআই আমাদের পাওনা আদায়ের ব্যবস্থা করবে নিশ্চয়ই।” মা-সারদার মূর্তিটির দেখাশোনা করেন রতনবাবু। রিসর্টের চাবিও থাকে তাঁর কাছে।
আরও এক জন পাওনা আদায়ের আশা ছাড়েননি। তিনি মেটেলি ব্লকের তৃণমূল নেতা, তথা ঠিকাদার রেজাউল বাকি। রেজাউল দাবি করেন, “রিসর্ট নির্মাণের ঠিকাদারি বাবদ সারদার থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পাওনা আছে। টাকা না-পাওয়া অবধি রিসর্টের অধিকার ছাড়া যাবে না।” রিসর্ট থেকে যাতে কিছু অর্থাগম হয়, তার জন্যে গত বছর পুজোর সময় মাসখানেকের জন্যে রিসর্ট পর্যটকদের জন্যে খুলেও দেন তিনি। রেজাউল বলেন, “রিসর্টের চাবিটি প্রশাসনের কাছে দিতে চেয়েছিলাম। যোগাযোগ করে সাড়া পাইনি।” মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি জানান, প্রশাসনিক নজরেই রিসর্টটি রয়েছে। তিনি বলেন, “সারদার রিসর্ট সিল করে দেওয়ার প্রশাসনিক নির্দেশ না থাকায় তালা ঝোলাতে পারিনি।”
কী নির্দেশ আসে, কবে আসে, জানেন না কেউ। তারই মধ্যে পর্যটকরা বাইরে থেকে দেখে, ছবি তুলে আশ মেটাচ্ছেন। রতনবাবু বলেন, “যে ক’মাস খোলা ছিল, তখন এত পর্যটক আসেনি রিসর্টে। বন্ধ হওয়ার পর বেশি লোক দেখতে আসছে।”