সারদা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে গত বছর তিনি নিজেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, “আমি চোর, মুকুল চোর, মদন চোর, কুণাল চোর?” এ বার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই জোর গলায় জানিয়ে দিলেন, সারদা থেকে তিনি এক পয়সাও খাননি! গত বছর মুখ্যমন্ত্রী যে চার জনের নাম করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে এক জন, তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ অবশ্য এখন সারদা কেলেঙ্কারিতেই অভিযুক্ত হয়ে জেলে।
বিধানসভায় পুলিশ বাজেটের উপরে বিতর্কে শুক্রবার বিরোধী বামফ্রন্টের বিধায়কেরা সারদা-তদন্তে ইডি এবং সিবিআইয়ের সঙ্গে
রাজ্য পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগে সরব হয়েছিলেন। জবাবি ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই বলেন, “সারদা থেকে আমি এক পয়সাও খাইনি! আমাদের কোনও ভয় নেই। ভয় আছে আপনাদের!” সিবিআই বা কেন্দ্রীয় কোনও তদন্ত সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করতে রাজ্য সরকার তৈরি বলেও এ দিন দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সারদা-তদন্তে অসহযোগিতার বিষয়টি এ দিন বিধানসভায় প্রথম তুলেছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহ। তাঁর বক্তব্য, সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধারের স্ত্রী ও পুত্রকে কলকাতা থেকে ইডি গ্রেফতার করল। অথচ রাজ্য পুলিশ তাঁদের খুঁজে পায়নি! শুধু বিরোধী শিবিরের বিধায়ক বলে নয়, রাজ্যবাসী হিসাবেই এই ঘটনা তাঁদের কাছে লজ্জাকর বলে মন্তব্য করেন উদয়নবাবু। সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরেও রাজ্য প্রশাসন সহযোগিতা করছে না বলে তাঁর অভিযোগ ছিল। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ব্যাখ্যা দেন, এ সবই বিচারাধীন বিষয়। তাই কার্যবিবরণী থেকে আদালত সংক্রান্ত বিষয় বাদ যাবে। উদয়নবাবু এবং পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁরা বিচারাধীন বিষয়ে কোনও মন্তব্য করছেন না। মামলার রায় বেরিয়ে যাওয়ার পরে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলছেন মাত্র। স্পিকার এই যুক্তি মানেননি। যদিও স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন এবং সেই বক্তব্য সভার কার্যবিবরণীতে নথিভুক্তও হয়েছে!
জবাব দিতে গিয়ে বাম বিধায়কদের পাল্টা চ্যালেঞ্জই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্য সরকার অসহযোগিতা করছে, এই অভিযোগ আপনাদেরই প্রমাণ করতে হবে!” মুখ্যমন্ত্রী জানান, সারদার মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠানো হয়েছে। কাজেই বিরোধীদের অসহযোগিতার অভিযোগ সারবত্তাহীন। বিরোধী দলনেতা অবশ্য পরে বিধানসভা চত্বরে প্রশ্ন তোলেন, ব্যাঙ্কে ইডি যাওয়ার আগেই লকার ভেঙে ফেলা, ডায়েরি খুঁজে না-পাওয়ার ঘটনাগুলো তবে কীসের ইঙ্গিত?