পরিস্থিতি ভয়ানক কঠিন। জ্যোতি বসু-প্রমোদ দাশগুপ্তদের শিক্ষা কাজে লাগিয়েই সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে দলে তৈরি করতে হবে উত্তরসূরিদের। প্রমোদ দাশগুপ্ত স্মারক বক্তৃতায় এমনই আহ্বান জানালেন বিরোধী দলনেতা এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র।
‘বামপন্থী আন্দোলন: কমরেড জ্যোতি বসু এবং বর্তমান প্রতিকূলতা’ রবিবার এই ছিল এ বারের স্মারক বক্তৃতার বিষয়। সেই ১৯৫২ সালের সাধারণ নির্বাচন থেকে জ্যোতিবাবু, প্রমোদবাবুরা কী ভাবে যুক্তফ্রন্ট গড়ার কৌশলকে হাতে-কলমে প্রয়োগ করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন, সেই দৃষ্টান্ত থেকে শুরু করে বামপন্থী আন্দোলনকে যুগের প্রয়োজনে পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দক্ষতার কথা এ দিন স্মরণ করেছেন সূর্যবাবু। এখনকার পরিস্থিতি উল্লেখ করে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, গণতন্ত্র, জীবন-জীবিকা ও ধর্মনিরপেক্ষতা, এই তিন বিষয়ের উপরে আক্রমণ চলছে। রাজনীতি, মতাদর্শ, সংগ্রাম এবং সংগঠন এই চার অস্ত্রের সাহায্যে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। এ কথা বলতে গিয়েই সূর্যবাবুর বক্তব্য, “এই সঙ্কট মোকাবিলা করতে পারে একমাত্র বামপন্থীরাই। প্রমোদ দাশগুপ্ত, জ্যোতি বসুর উত্তরাধিকার আমাদের রক্ষা করত হবে। আবার উত্তরসূরিদের হাতে নতুন দায়িত্ব দিয়ে যেতে হবে।”
রাজ্যে সাতের দশকের ঘটনার অভিজ্ঞতা যাঁদের নেই, সিপিএমের অন্দরে সেই অপেক্ষাকৃত তরুণ অংশকে দলের অন্দরেই অনেক সময় কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই মনোভাব যে ঠিক নয়, প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের বক্তৃতায় এ দিন তা-ই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন সূর্যবাবু। তাঁর যুক্তি, রাজ্যে তৃণমূল এবং কেন্দ্রে সদ্য বিজেপি ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরে এমন অনেক পরিস্থিতির মুখোমুখি বামেদের হতে হচ্ছে, যার অভিজ্ঞতা কারওরই নেই। তরুণ প্রজন্ম আগেকার ঘটনা দেখেনি বলে তাদের দায়িত্ব দেওয়া যাবে না, এমন ধারণাকেই খণ্ডন করতে চেয়েছেন সূর্যবাবু। পাশাপাশিই দেখিয়েছেন, কেমন অকল্পনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
সংসদে বাজেট পেশের পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি-সহ অনেকের মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ কে ডি সিংহ, এমন খবর বেরিয়েছে কাগজে। সেই উদাহরণ দিয়েই সূর্যবাবু এ দিন বলেন, “যাঁর সংস্থা সেবি-র কালো তালিকায়, তিনি ঢুকে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর রান্নাঘরে! চিট ফান্ড নিয়ে আমরা তিন বছর ধরে বলে যাচ্ছি। বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী ভোট-প্রচারে এসে চিট ফান্ড নিয়ে এত কথা বললেন, সিবিআই হল সে সবের মানে আর কী থাকে, যদি এটাই ঘটে?”