সুব্রত বিজেপিতে গেলে মঞ্জুল কী করবে, মতুয়া মহলে জল্পনা তুঙ্গে

বড় ছেলে সুব্রত এক রকম পা বাড়িয়ে রয়েছেন বিজেপি-র দিকে। ছেলে বিজেপি-তে যোগ দিলে এবং বনগাঁ লোকসভা উপ-নির্বাচনে তাদের প্রার্থী হলে তাঁর বাবা তথা তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর কী করবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে মতুয়া মহল এবং তৃণমূলের অন্দরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৩
Share:

মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর

বড় ছেলে সুব্রত এক রকম পা বাড়িয়ে রয়েছেন বিজেপি-র দিকে। ছেলে বিজেপি-তে যোগ দিলে এবং বনগাঁ লোকসভা উপ-নির্বাচনে তাদের প্রার্থী হলে তাঁর বাবা তথা তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর কী করবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে মতুয়া মহল এবং তৃণমূলের অন্দরে। কেউ বলছেন, মন্ত্রিত্ব তো বটেই, দলও ছাড়তে পারেন মঞ্জুল। আবার কারও বক্তব্য, সুব্রতর সিদ্ধান্তের দায় মন্ত্রী নিতে যাবেন কেন? ধোঁয়াশা কাটেনি মঞ্জুলের বক্তব্যে, যিনি বলেছেন, “সময়মতো সবই বলব।” সুব্রতর আশ্বাস, “সব প্রশ্নের জবাব পেতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”

Advertisement

আজ, বৃহস্পতিবারই উপ-নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করতে পারে রাজ্য বিজেপি-র নির্বাচন কমিটি। তার ঠিক আগে, বুধবার সুব্রতকে (নাম না করে) দল প্রার্থী বাছলে তাঁরা বিরোধিতা করবেন বলে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের গাড়ি ঘিরে বারাসতে বিক্ষোভ দেখান দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। আবার এ দিনই মতুয়া সম্প্রদায়ের ‘বড়-মা’ বীণাপানিদেবী সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, আসন্ন উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে তিনি রয়েছেন

তাঁর বড় পুত্রবধূ (প্রয়াত সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী) মমতাবালা ঠাকুরের পাশে। তৃণমূল অন্দরের খবর, দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মমতাবালার নাম প্রথম সারিতে উঠে আসাই মঞ্জুল-শিবিরের গোসার অন্যতম কারণ।

Advertisement

মঙ্গলবার থেকে উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরের বাড়ি ছেড়ে মঞ্জুল এবং সুব্রত রয়েছেন কলকাতায়। ওই দিনই সুব্রতকে বলতে শোনা গিয়েছিল, বিজেপি-র হয়ে প্রার্থী হতে আপত্তি নেই তাঁর। সুব্রত জানিয়েছেন, বুধবার রাত পর্যন্ত তিনি বিজেপি-তে যোগ দেননি। বলেছেন, “বৃহস্পতিবার যা হওয়ার, হবে।” কিন্তু সুব্রত বিজেপি-তে গেলে, তাঁর বাবা কী করবেন? মঞ্জুলবাবুর বক্তব্য, “ছেলের নিজস্ব মত আছে। ও যদি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়, আমি কী বলতে পারি?” কিন্তু ভোটের আগে রাজ্যের শাসক দলের মন্ত্রীর ঘরে ‘ফাটল’ ধরাতে পারা তো বিজেপি নিজেদের সাফল্য হিসেবেই দেখাবে? মন্ত্রীর জবাব, “এখনই এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় আসেনি।”

মতুয়াদের একটা বড় অংশ জানেন, গত লোকসভা ভোটে মঞ্জুল চেয়েছিলেন, সুব্রতকে বনগাঁ আসনে প্রার্থী করতে। ছেলে টিকিট না পাওয়ায় জেলা তৃণমূলের একটি অংশের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই ক্ষোভ মঞ্জুল-শিবিরের। কপিলকৃষ্ণের মৃত্যুর পরে উপ-নির্বাচনেও টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস না মেলায় শাসক দলের কর্মকাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে নিজেকে সরিয়েছেন গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সদস্য সুব্রত। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, মতুয়া সম্প্রদায়ের দৌলতে মঞ্জুল ঠাকুরের সঙ্গে বিজেপি-র স্থানীয় কিছু নেতার ঘনিষ্ঠতা ছিল। টিকিট সংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহ মঞ্জুল-শিবিরের সঙ্গে আরও দূরত্ব কমিয়েছে বিজেপি-র। জেলা বিজেপি-র একটি সূত্রের দাবি, প্রার্থী হিসেবে প্রথমে মঞ্জুল ঠাকুরকেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ছেলের বিষয়ে আগ্রহ দেখান। সে ক্ষেত্রে বিজেপি শর্ত দিয়েছে, মঞ্জুলকে দল ও মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মুচকি হেসেছেন মন্ত্রী। মন্তব্য করেননি। তবে জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, “সুব্রতকে যদি বিজেপি প্রার্থী করে, তা হলে নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রিত্ব তো বটেই হয়তো দলও ছাড়তে হবে মঞ্জুলকে।”

এ দিকে, সুব্রতকে (নাম না করে) প্রার্থী করা হলে তাঁদের আপত্তি রয়েছে জানিয়ে এ দিন বারাসতের রথতলায় রাহুল সিংহের গাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান কয়েকশো বিজেপি সমর্থক। বিক্ষোভকারীরা চিৎকার করতে থাকেন, “আমাদের শত্রু তৃণমূলের কোনও মন্ত্রীর ছেলে এবং গরু পাচার সিন্ডিকেটের মালিককে প্রার্থী করা যাবে না।” পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় পুলিশকে। রাহুলবাবু অবশ্য বলেন, “প্রার্থী কে হবেন, এখনও বলার সময় আসেনি।” সুব্রত বলেন, “আমার সম্পর্কে বিজেপি-র নেতারা সব জানেন। সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। দেখুন না, ওঁরা কী সিদ্ধান্ত নেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement