বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের সামনে তৃণমূলের কর্মিসভার প্রস্তুতি। সোমবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
শিল্পতালুকে নেই শিল্পই! অধিগৃহিত ১২৪৯ একর জমির সিংহভাগই ফাঁকা পড়ে (৯৪৪ একর)। জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা মিললেও, নতুন কারখানা না হওয়ায় মেলেনি চাকরি। খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের ময়দানে সেই জমিতেই আজ, মঙ্গলবার দুই মেদিনীপুরের কর্মীদের নিয়ে সাংগঠনিক সভা করবেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিল্পতালুকে এমন কর্মসূচি দেখে জমিদাতা পরিবারের সদস্যেরা ক্ষোভের সঙ্গে বলছেন, অধিগৃহীত জমিতে কর্মিসভা নয়, হোক শিল্প অগ্রাধিকার পাক কর্মসংস্থানের মতো জরুরি বিষয়।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক গড়তে ২০০৪ সালে জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় তদানীন্তন বাম সরকার। ২০০৬ সালে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। জফলা, রুইসণ্ডা, রূপনারায়ণপুর, বড়ডিহা, চকগণেশ, জিহারপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার ১২৪৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম একর পিছু দাম দেয় ১০ লক্ষ টাকা। প্রতিশ্রুতি ছিল, পরিবার পিছু এক জনের চাকরি হবে। পরে ওই জমি শিল্পোন্নয়ন নিগমের মাধ্যমে কিনে নেয় টেলকন, হার্ডরক, গণপতি অটো, ট্রাক্টর ইন্ডিয়া লিমিটেড, বিআরজি, একরোপল্লি-সহ বেশ কিছু শিল্পসংস্থা। কিন্তু আট বছর পর এখন শুধু টেলকন চালু রয়েছে। গণপতি অটো, ট্রাক্টর ইন্ডিয়া, হার্ডরক, ইম্পেরিয়াল অটো এখনও জমি নিয়ে ফেলে রেখেছেন বলে জমিদাতাদের দাবি।
জফলার জমিদাতা শেখ মহম্মদ হুসেন সোমবার সঙ্গে বলেন, “পাঁচ বিঘে জমি খুব কম দরে দিয়েছিলাম। একটাই আশায়, শিল্প হলে কাজ পাব। এলাকারও উন্নয়ন হবে। কিন্তু, সে তো স্বপ্নই রয়ে গেল!” নতুন সরকারও উদ্যোগী না হওয়ায় ক্ষুব্ধ সুধীর রায়, শেখ ইকবালরা, শেখ সরফারোজ নওয়াজও। তাঁরা স্পষ্টই বলছেন, “রাজনৈতিক সভা নয়, শিল্প চাই।” স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় ৪৬২ জন জমিদাতার মধ্যে মাত্র ৪০ জন বিআরজি নামে একটি কারখানায় কাজ পেয়েছেন। বাকিরা কেউ নির্মাণ শ্রমিকের কাজ, কেউবা অবশিষ্ট জমিতে চাষাবাদ করছেন।
বিআরজি কারখানার জেনারেল ম্যানেজার রাজকুমার দাইমা বলেন, “আমাদের দু’টি প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে। একটি প্রকল্প চালু হয়েছে। সেখানে চারটি মেশিন কাজ করছে। তাতে যে পরিমাণ শ্রমিক প্রয়োজন, তা ইতিমধ্যেই জমিদাতাদের মধ্য থেকে নেওয়া হয়েছে। পরে কারখানা সম্প্রসারণ করলে ধীরে ধীরে জমিদাতাদের ধীরে নেওয়া হবে।”
শিল্পের জন্য জমি বছরের পর বছর পড়ে থাকায় সরকারের গড়িমসি এবং শিল্পনীতিকেই দায়ি করছেন বিরোধীরা। এমন শিল্পতালুক মুখ্যমন্ত্রীর কর্মিসভার জন্য নির্দিষ্ট হওয়ায় তৃণমূল তথা দলনেত্রীকে বিঁধতে ছাড়ছেন না তাঁরা। বিজেপি-র জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খেলা, গান-বাজনা, শিলান্যাস সব কিছুই তো শিল্প! শিল্পের জমিতে সভাকেও তিনি হয়তো শিল্পের তালিকায় রেখেছেন।” রাজ্য সরকারের শিল্পনীতি ও উদ্যোগহীনতা রাজ্যকে পিছিয়ে দিচ্ছে। আগে ভিন্ রাজ্য থেকে চাকরি করতে অনেকে রাজ্যে এলেও ছবিটা এখন পুরোপুরি উল্টো, কটাক্ষ সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের।
একই সুরে জেলা এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব ভট্টের তোপ, “জমিদাতাদের বুকের উপরে মুখ্যমন্ত্রী সভা করবেন। কিন্তু শিল্পের কী হবে? আশা করব, মুখ্যমন্ত্রী কর্মীদের উৎসাহিত করার শিল্প নিয়ে সদর্থক কোনও বার্তা দেবেন।” যদিও আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “রেলের অনুমতি না মেলাতেই জট তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকার শিল্পের, উন্নয়নের ব্যাপারে আন্তরিক।”