শিক্ষক নিয়োগ কবে, বিধানসভায় প্রশ্নবাণ পার্থকে

চাকরির দাবিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর সামনে অনশন-আন্দোলন চালাচ্ছেন কিছু প্রার্থী। প্রশিক্ষণহীন প্রার্থী নিয়োগে কেন্দ্রীয় সরকারের ছাড়পত্র মেলেনি বলে এবং সেই সঙ্গে আদালতের স্থগিতাদেশের জেরে আটকে আছে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির জন্য শিক্ষক বাছাইয়ের এসএসসি পরীক্ষা। কেন্দ্রের ছাড়পত্র না-পেয়ে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় (টেট) শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের বসার অনুমতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২০
Share:

• চাকরির দাবিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর সামনে অনশন-আন্দোলন চালাচ্ছেন কিছু প্রার্থী।

Advertisement

• প্রশিক্ষণহীন প্রার্থী নিয়োগে কেন্দ্রীয় সরকারের ছাড়পত্র মেলেনি বলে এবং সেই সঙ্গে আদালতের স্থগিতাদেশের জেরে আটকে আছে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির জন্য শিক্ষক বাছাইয়ের এসএসসি পরীক্ষা।

• কেন্দ্রের ছাড়পত্র না-পেয়ে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় (টেট) শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের বসার অনুমতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিধানসভায় বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়লেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক তাজমুল হোসেন সোমবার বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জানতে চান, প্রাথমিক স্তরে কত শিক্ষকপদ খালি? এবং ওই সব পদ কবে পূরণ করা হবে? এসএসসি মারফত শিক্ষক বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

পার্থবাবু জানান, প্রাথমিকে ৩০ হাজার পদ শূন্য। সেখানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। তিনি আগে বহু বার যে-কথা বলেছেন, বিধানসভায় এ দিন আবার তা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। জানান, রাজ্যে শিক্ষকের চাহিদা প্রচুর। কিন্তু প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ছাড়পত্র না-মেলায় অত পদে শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব হচ্ছে না। প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগের অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রকে নতুন করে চিঠি দিয়েছে রাজ্য। কিন্তু তার উত্তর মেলেনি। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকপদে প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগ করার জন্য ওড়িশা-ত্রিপুরার মতো কিছু রাজ্যকে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গকে তা দেওয়া হচ্ছে না।

প্রাথমিকে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ পাওয়া বা ডিএলএড ডিগ্রিধারী এবং পঞ্চম থেকে অষ্টমের জন্য বিএড ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা চাহিদার তুলনায় কম বলেই জানাচ্ছে স্কুলশিক্ষা দফতর। অথচ প্রশিক্ষণহীন প্রার্থী নিয়োগের সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে গত ৩১ মার্চ। আরও অন্তত এক বছর যাতে প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগ করা যায়, সেই ছাড়ের ব্যবস্থা করার জন্য কেন্দ্রের কাছে বারবার আবেদন জানিয়েছে রাজ্য। কিন্তু প্রশিক্ষিত প্রার্থীর চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ফারাকের কথা মানতেই চাইছে না কেন্দ্র। তাই নিয়োগে ছাড়ের সীমা বাড়াতেও রাজি নয় তারা।

শিক্ষামন্ত্রী তো বটেই, খোদ রাজ্যপালও প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগে ছাড় চেয়ে কেন্দ্রের কাছে চিঠি লিখেছেন বলে রাজ্য সরকারের দাবি। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। তাই সম্প্রতি শুধু প্রশিক্ষিতদের নিয়োগের কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।

এসএসসি-র ক্ষেত্রে আবার সেটুকুও করা সম্ভব হয়নি। কারণ, সেখানে আদালতের স্থগিতাদেশ জারি আছে। সব মিলিয়ে স্কুল স্তরে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষকপদ খালি বলে এ দিন বিধানসভার বাইরে জানান শিক্ষামন্ত্রী। এই অবস্থায় কোন জেলায় কত স্কুলে ছাত্র আছে কিন্তু শিক্ষক নেই এবং কোথায় কোথায় শিক্ষক আছেন কিন্তু ছাত্র নেই, সেই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যাতে যেখানে শিক্ষক উদ্বৃত্ত, প্রয়োজন অনুযায়ী সেখান থেকে বদলির মাধ্যমে অন্যত্র শূন্য শিক্ষকপদ পূরণ করা যায়।

পঞ্চম থেকে অষ্টম, এই চারটি শ্রেণির পঠনপাঠনের জন্য শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কিন্তু এই পদ্ধতি অবলম্বন করা সম্ভব নয়। কারণ, এসএসসি মারফত স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় কয়েকটি শর্ত থাকে। শর্তগুলি বিষয়, অঞ্চল, শ্রেণি (সংরক্ষিত ও অসংরক্ষিত) ইত্যাদি সংক্রান্ত। দীর্ঘদিন পরীক্ষা বন্ধ থাকায় এবং ফের কবে তা শুরু হবে, সেই বিষয়ে তাঁদের কারও কাছেই সুনির্দিষ্ট তথ্য না-থাকায় এই সব শর্ত কিছুটা শিথিল করার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। এ দিন বিধানসভার বাইরে শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষক নিয়োগে অঞ্চল, শ্রেণি ইত্যাদির শর্ত তুলে দেওয়া যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে।

এসএসসি-র পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের বদলির পদ্ধতিতেও কিছুটা বদল চায় সরকার। এখনকার নিয়ম, এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে যাঁরা শিক্ষকতা করছেন, অন্তত পাঁচ বছর কাজ না-করা পর্যন্ত তাঁরা বদলির জন্য আবেদনই জানাতে পারবেন না। অথচ শারীরিক বা পারিবারিক নানা কারণে অনেক সময় অনেক শিক্ষকের পাঁচ বছর কার্যকালের আগেই বদলির দরকার হয়। কিন্তু নিয়ম বাঁধা বলে সেই সব ক্ষেত্রে কমিশন বা স্কুলশিক্ষা দফতরের কিছুই করার থাকে না।

এই নিয়মের জন্য তিনি নিজেও কতটা অসহায়, শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে তা জানিয়েছেন। পার্থবাবুর বক্তব্য, ক্যানসারে আক্রান্ত প্রার্থী নথিপত্র-সহ তাঁর কাছে বদলির আবেদন জানালেও কিছু করার থাকে না। এবং তার কারণ ওই পাঁচ বছরের সময়সীমা। তাই এই সীমা শিথিল করতে চায় সরকার। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কেউ প্রয়োজনীয় নথিপত্র-সহ বদলির আবেদন জানালে স্কুলশিক্ষা দফতর যাতে তা বিবেচনা করে ওই শিক্ষক বা শিক্ষিকার আর্জি মঞ্জুর করতে পারে, সেই সংক্রান্ত নিয়মবিধি চালু করতে চাইছে রাজ্য।

অনশন শেষ পার্শ্বশিক্ষকদের

কলেজ স্ট্রিটে টানা ১০ দিন অর্ধেক রাস্তা আটকে অবস্থান-অনশন করেছেন তাঁরা। সোমবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে পার্শ্বশিক্ষকেরা সেই আন্দোলনে ইতি টানলেন। তবে তাঁদের বেতন বাড়ানোর দাবি এখনই মানা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী। এ দিন বিধানসভা ভবনে পার্থবাবুর ঘরে ওই বৈঠক হয়। আন্দোলনকারীদের তরফে রমিউল ইসলাম শেখ জানান, শিক্ষামন্ত্রী তাঁদের ৩১ মার্চের মধ্যে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন। এই আশ্বাসের ভিত্তিতেই আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রী পরে বলেন, “পার্শ্বশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত হচ্ছে। ৩১ মার্চের মধ্যে প্রশিক্ষণ পাঠ্যক্রমে তাঁদের নাম নথিভুক্ত করা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement