লড়াই কঠিন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়ানোর বার্তা মমতার

বাংলায় ভোটের লড়াই এ বার চতুর্মুখী। লড়াই যে সহজ নয়, তা তিনি বিলক্ষণ জানেন। মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের প্রচার-কর্মসূচি আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করে দলের নেতা-কর্মীদেরও লড়াইয়ের জন্য তৈরি হওয়ার বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট বোঝালেন, দলের অন্দরে গোষ্ঠী-লড়াইয়ের সময় এখন নয়। বিষ্ণুপুরের পৈলানহাটে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের কর্মিসভায় বক্তা ছিলেন মমতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৪ ০২:৩৪
Share:

ভাইপো অভিষেককে সঙ্গে নিয়ে কর্মিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার পৈলানহাটে। ছবি: সুমন বল্লভ।

বাংলায় ভোটের লড়াই এ বার চতুর্মুখী। লড়াই যে সহজ নয়, তা তিনি বিলক্ষণ জানেন। মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের প্রচার-কর্মসূচি আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করে দলের নেতা-কর্মীদেরও লড়াইয়ের জন্য তৈরি হওয়ার বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট বোঝালেন, দলের অন্দরে গোষ্ঠী-লড়াইয়ের সময় এখন নয়।

Advertisement

বিষ্ণুপুরের পৈলানহাটে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের কর্মিসভায় বক্তা ছিলেন মমতা। বিষ্ণুপুর বিধানসভা ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। যে লোকসভা আসনে তৃণমূল প্রার্থী ‘যুবা’র সভাপতি এবং মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে দলীয় প্রার্থীদের জেতানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার যে নির্দেশ মমতা এ দিন দিয়েছেন, তাকে কোনও একটি বিশেষ জেলা নয়, গোটা রাজ্যের ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতেই দেখছে তৃণমূল শিবির।

দলের বিভাজন ঢাকার চেষ্টার পাশাপাশি ঘটনাচক্রে এ দিনই অবাঙালি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব আরও এক বার দূর করার চেষ্টা করেছেন মমতা। আমরি-কাণ্ডের পরে রাজ্যের পদক্ষেপে শাসক দলের প্রতি কিঞ্চিৎ ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন অবাঙালি ব্যবসায়ীকুল। তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতির চেষ্টা অবশ্য আগেই শুরু করেছিল তৃণমূল। কিন্তু লোকসভা ভোটের মুখে বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা রাজ্যে বিজেপি-র ভোট বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এবং অবাঙালি সমাজকে ঐতিহ্যগত ভাবেই বিজেপি-সমর্থক বলে গণ্য করা হয়। এই অবস্থায় পৈলানহাটের কর্মিসভার পরেই মাঝেরহাটে আন্তর্জাতিক মাড়োয়ারি ফেডারেশনের আয়োজিত সম্মেলনে হাজির হন মমতা। সেখানে মাড়োয়াড়ি সম্প্রদায়ের উদ্দেশে ‘আমি তোমাদেরই লোক’ এই বার্তা দিয়ে তিনি কঠিন লড়াইয়ের আগে ঘর গোছানোর কাজ সারলেন বলে তৃণমূলের অনেক শীর্ষ নেতাই মনে করছেন।

Advertisement

এ বার লোকসভার লড়াই ‘সহজ নয়’, এ দিন নিজের মুখেই কবুল করেছেন মমতা। বলেছেন, সিপিএমের ধ্বংসাত্মক, বিজেপি-র সাম্প্রদায়িক এবং কংগ্রেসের দুর্নীতি ও জনস্বার্থ-বিরোধী রাজনীতি এই ত্রিফলা সামলে একক ভাবে লড়তে হচ্ছে তৃণমূলকে। তাঁর কথায়, “তিন জনকে হারিয়ে আমাদের জিততে হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে।” এই জয়ের রাস্তায় যেতে হলে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রবণতা যে ছাড়তে হবে, কৌশলে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাও। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মোট পাঁচটি আসনে পাঁচ প্রার্থীর কথা উল্লেখ করে তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, “কে কার লোক, কোথা থেকে এসেছে, কাকে পছন্দ, কাকে পছন্দ নয়, আজ সেটা আলোচনার দিন নয়!” দেশে তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি হয়ে ওঠার লক্ষ্যে তাঁদের লড়াইয়ের কথাও কর্মীদের কাছে ব্যাখ্যা করেন মমতা।

জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, গত পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য জুড়ে সাফল্যের আবহেও ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, বিষ্ণুপুর, সাতগাছিয়া বিধানসভা এলাকার নানা জায়গায় শাসক দলের ভোট-ব্যাঙ্কে কিছুটা ভাঙন ধরেছে। বিরোধী সিপিএম একাধিক পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েত দখল করেছে। দলের গোষ্ঠী-বিবাদের জেরে পঞ্চায়েতে বিরোধীরা লাভবান হয়েছে বলে তৃণমূলের পর্যালোচনায় তখনই উঠে এসেছিল। তার উপর এই কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্র সম্প্রতি দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

তৃণমূলের অন্দরের সমস্যা অবশ্য শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই নয়। প্রার্থী ঘোষণার পরে উত্তর ২৪ পরগনাতেও একাধিক শিবিরের বিবাদ প্রকাশ্যে এসেছে। কোথাও কোথাও সেই বিবাদ গড়িয়েছে সংঘর্ষে। উত্তরবঙ্গের মালদহে প্রার্থীদের উপস্থিতিতেই দলের জেলানেত্রী এবং মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র তোপ দেগেছেন আর এক মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এমনকী, জেলায় মমতার আসন্ন সফরও দুই মন্ত্রীকে এক করতে পারেনি। সভার প্রস্তুতি দেখভাল করতে এ দিন আলাদা আলাদা ভাবে মাঠে গিয়েছেন কৃষ্ণেন্দু, সাবিত্রী। কৃষ্ণনগরে তাপস পালকে প্রার্থী করা নিয়ে অখুশি তৃণমূলের একাংশ। সোমবার নেতা-কর্মী-বিধায়কদের অনুপস্থিতিতে তেমন জমেনি তাঁর মিছিল। বালুরঘাটে প্রার্থী কেন বহিরাগত, তা নিয়ে দলেরই নেতাদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন।

শাসক দলের একটা অংশ মনে করছে, ঘরের এই দ্বন্দ্ব মেটানোই তৃণমূল নেত্রীর বড় চ্যালেঞ্জ। আর সে কথা মাথায় রেখেই এ দিন কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

অভিষেককে কেন প্রার্থী করা হল, এ দিনের কর্মিসভায় তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন মমতা। দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অভিষেকের পরিচয় করাতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, “ও দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করছে। রাজনীতি করতে ভালবাসে। সোনার চামচ মুখে দিয়ে রাজনীতি করতে আসেনি! কোনও ‘ব্যাকিং’ নিয়ে রাজনীতি করবে না! মানুষের পাশে থেকেই রাজনীতি করবে।” তাঁর আরও বক্তব্য, “আমি অভিষেককে আপনাদের কাছে পাঠিয়েছি!” জেলা তৃণমূলের এক নেতার ব্যাখ্যায় অভিষেক মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো বলে টিকিট পেয়েছেন, কর্মীদের একাংশের মধ্যে যে এই ধারণা তৈরি হয়েছে, সেটা আঁচ করেই মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত এমন কথা বলেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement