ঘটনার ৮৬ দিনের মাথায় লাভপুর গণধর্ষণ-কাণ্ডে ১৩ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিল বীরভূম পুলিশ। ঘটনার তদন্তকারী অফিসার, জেলা পুলিশের ডিএসপি (সদর) পার্থ ঘোষ শুক্রবার বোলপুর আদালতে ৪১৬ পাতার ওই চার্জশিট জমা দেন। সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল বলেন, “বোলপুরের ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম সুতপা মল্লিকের এজলাসে ছ’টি ধারায় তেরো জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার কথা ওই চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে।”
গত ২০ জানুয়ারি লাভপুর থানার রাজারামপুরে ভিন্ সম্প্রদায়ের এক যুবকের সঙ্গে বছর কুড়ির ওই আদিবাসী তরুণীকে দেখা গিয়েছিল। সেই ‘অপরাধে’ তাঁদের দু’জনকেই প্রথমে সারা রাত গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। পরের দিন তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের গ্রাম, সুবলপুরের সালিশি সভায়। দু’জনকেই মোটা টাকার জরিমানা ধার্য করেন গ্রামের মোড়ল। টাকা দিতে না পারায় মোড়লের নির্দেশে গ্রামেরই ১২ জন মিলে তাঁকে রাতভর ধর্ষণ করে বলে ২২ জানুয়ারি লাভপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। অভিযোগ পাওয়ার পর পরই সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে লাভপুর পুলিশ। প্রথমে অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে না নেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ে জেলা পুলিশ। ফের বোলপুর আদালতেই নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আর্জি জানায় পুলিশ।
২৭ জানুয়ারি দেশের সবোর্চ্চ আদালত ওই ঘটনা সম্পর্কে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে। গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে মানবাধিকার কমিশন-সহ একাধিক সংগঠন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিচারকদের একটি দল সরেজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠান। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নির্যাতিতা তরুণীকে আর্থিক সহায়তা করেছে রাজ্য সরকার। বর্তমানে নির্যাতিতা তরুণী রয়েছেন সিউড়ির একটি হোমে। তাঁর জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কাজ চলছে।
৮৬ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা পড়লেও ফরেন্সিক রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি জেলা পুলিশের। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪২ (বেআইনি ভাবে আটকে রাখা), ৩৭৬-ডি (গণধর্ষণ), ৩৮৪ (ভয় দেখিয়ে কোনও কিছু আদায় করা), ৩২৬ (মারধর), ৩৫৪-এ (অপহরণ করে টাকা পয়সা আদায়) এবং ৫০৬ (হুমকি তথা ভীতি প্রদর্শন করা) ধারায় মামলা হয়েছে। ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে পেলে মূল চার্জশিটের সঙ্গে তা যোগ করা হবে। আগামী ২৮ এপ্রিল অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী।