লোডশেডিংয়ের নালিশে ক্ষোভ, কর্তাদের কড়কে দিলেন মমতা

রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবার দরাজ প্রশংসা করে কয়েক দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকে লিখেছিলেন, তাঁর আমলে লোডশেডিংয়ের অভিজ্ঞতা অতীত স্মৃতিচারণায় পর্যবসিত হয়েছে। অথচ শুক্রবারই বারাসতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের বৈঠকে তৃণমূলের কয়েক জন বিধায়ক লোডশেডিং নিয়ে তাঁর কাছে বিস্তর অভিযোগ করেন। তা শুনে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন হয় ঠিকমতো কাজ করুন, না হলে দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৪ ০২:৫১
Share:

রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবার দরাজ প্রশংসা করে কয়েক দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকে লিখেছিলেন, তাঁর আমলে লোডশেডিংয়ের অভিজ্ঞতা অতীত স্মৃতিচারণায় পর্যবসিত হয়েছে। অথচ শুক্রবারই বারাসতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের বৈঠকে তৃণমূলের কয়েক জন বিধায়ক লোডশেডিং নিয়ে তাঁর কাছে বিস্তর অভিযোগ করেন। তা শুনে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন হয় ঠিকমতো কাজ করুন, না হলে দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান।

Advertisement

এ বারের গ্রীষ্ণে তাপমাত্রা রেকর্ড ছোঁয়া সত্ত্বেও বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পেরেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। এই সাফল্য দেখেই মুখ্যমন্ত্রী ফেসবুকে ওই কথা বলেন। কিন্তু শনিবারই জেলার ব্যারাকপুর, বারাসত-সহ বেশ কিছু অঞ্চলে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে টানা লোডশেডিং শুরু হয়। কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ এলেও তার ভোল্টেজ ছিল অনেক কম। এলাকার মানুষের অভিযোগ, তার আগের সপ্তাহেও কোথাও কোথাও টানা আট ঘণ্টারও বেশি বিদ্যুৎ ছিল না। ঝড়বৃষ্টির কারণে ব্যারাকপুর ও সংলগ্ন অঞ্চলে টানা ২২ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে। বারাসত, হাবরা, বনগাঁ, বাগদা, ব্যারাকপুর, দেগঙ্গা, বসিরহাটে এখনও দিনে গড়ে তিন-চার ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। শুক্রবারের প্রশাসনিক বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ তুলেই শাসক দলের কয়েক জন বিধায়ক বণ্টন সংস্থার সমালোচনা করেন।

কী বলেছেন তাঁরা?

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রাজারহাটের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত প্রথম লোডশেডিং নিয়ে নালিশ করেন। তিনি বলেন “রাজারহাট, গোপালপুর, বিধাননগর-সংলগ্ন বেশ কিছু এলাকায় নিত্য লোডশেডিং চলছে। গড়ে প্রতিদিন চার-পাঁচ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না। কখনও বা টানা লোডশেডিং হচ্ছে।” তৃণমূল বিধায়কের ওই অভিযোগকে সমর্থন করেন আরও কয়েক জন জনপ্রতিনিধি। সব্যসাচীবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, “এখানে রাজারহাটের বিডিও-ও আছেন। ওঁকে জিজ্ঞেস করলেই পরিস্থিতি কী রকম ভয়ঙ্কর, তা বুঝতে পারবেন।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বিধায়কের অভিযোগ সমর্থন করেন বিডিও অমলেন্দু সমাদ্দার।

শাসক দলের বিধায়কেরা যখন এই অভিযোগ করছেন, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন বণ্টন সংস্থার পদস্থ কর্তারা। বৈঠকে এমন অভিযোগ ওঠায় তাঁরা বেশ থতমত খেয়ে যান। মুখ্যমন্ত্রী তখন আধিকারিকদের ভর্ৎসনা করে বলেন, “আমাদের রাজ্যে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকছে। তা হলে এমন পরিস্থিতি হচ্ছে কেন? আপনারা কি ঘুমোচ্ছেন?” শনিবার এ বিষয়ে সব্যসাচীবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “রাজারহাট বা বিধাননগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতেও দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে! বৈঠকে সে কথা বলতেই মুখ্যমন্ত্রী ওই কথা বলেন।”

ক্ষমতায় আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনও অবস্থাতেই লোডশেডিং করা যাবে না এবং বিদ্যুতের মাসুল সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখতে হবে। তথ্য বলছে, গত তিন বছরে গ্রীষ্মের সময় শহরে তেমন লোডশেডিং না হলেও গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ পরিষেবার মান নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। এ বছরও গ্রীষ্মে সব মিলিয়ে রাজ্যের প্রায় ৬০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়েছে বণ্টন সংস্থা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূলের কয়েক জন বিধায়কও মনে করেন, আগের তুলনায় লোডশেডিং এখন অনেক কম। বনগাঁর বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, অশোকনগরের বিধায়ক ধীমান রায়-সহ বনগাঁর সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর সেই কথাই জানিয়েছেন। তবু শেষ রক্ষা হয়নি। রাজ্যে যখন বর্ষা ঢুকে বিদ্যুতের চাহিদা অনেকটাই কমে গিয়েছে, তখন লোডশেডিং নিয়ে নালিশ ওঠায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে বিদ্যুৎ কর্তাদের।

যথেষ্ট উৎপাদন সত্ত্বেও কেন লোডশেডিং? বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগমের জবাব, “পরিকাঠামোগত সমস্যার জন্য কিছু কিছু জায়গায় মাঝে-মধ্যে লোডশেডিং হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা হচ্ছে।”

বণ্টন সংস্থা সূত্রে খবর, রাজারহাটের নারায়ণপুরে যে সাবস্টেশনটি রয়েছে, তার ক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। একই অবস্থা টিটাগড় সাবস্টেশনেরও। ফলে ওই সব এলাকায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাঝে-মধ্যে লোডশেডিং হচ্ছে। সমস্যার সমাধানে সাবস্টেশনের ক্ষমতা বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement